ব্যাংকারদের বাড়ি ভাড়ার ওপর আয়কর 'অন্যায্য' মনে করে পাঁচ ব্যাংক
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
আপত্তি সত্ত্বেও রাষ্ট্র মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়ার ওপর কর নিচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। তবে এই কর নেওয়াকে অন্যায্য দাবি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আইআরডি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কয়েক দফায় আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু তারা কোনো প্রতিকার পায়নি।
ব্যাংকগুলোর যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি, তারা সেই বেতন, প্রণোদনা ও উৎসব বোনাসের ওপর আয়কর দিয়ে আসছেন। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়িভাড়া আয়করমুক্ত। কিন্তু আইআরডির মনোভাব এমন যে এই পাঁচ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি চাকরিজীবী নন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মোট জনবল ৪৯ হাজার ৬১৭ জন, যার মধ্যে এই পাঁচ ব্যাংকেই রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।
বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই জটিলতা চলছে। তা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২০২৩ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে বিষয়টি স্পষ্টীকরণের আহ্বান জানিয়ে আইআরডিকে চিঠি পাঠায়। আইআরডি গত এক বছরেও এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানায়নি। সম্প্র্রতি একই বিষয়ে আবার চিঠি পাঠিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উলস্নাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বেসামরিক প্রশাসনের জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারির পর স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান; ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিচার বিভাগের জন্যও আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিদ্যমান জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় চাকরি [স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান] (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ নামে ৩৭০ এবং চাকরি [ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান] (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ নামে ৩৭১ নম্বর প্রজ্ঞাপন জারি রয়েছে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে কয়েক বছর ধরে ৩৭১ নম্বর প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু এ প্রজ্ঞাপনে পাঁচ ব্যাংকের নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকায় করযোগ্য আয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা দুই বছর ধরে প্রজ্ঞাপনটি অনুসরণ করা বাদ দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করা আছে ৩৭০ নম্বর প্রজ্ঞাপনে। ২০১৮ সালে প্রণীত সরকারি চাকরি আইনেও বলা আছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশের বেশি সরকারের শেয়ার থাকবে, সেগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, বহুদিন ধরে এটা নিয়ে জটিলতা চলছে। আইআরডি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়ার ওপরও আয়কর নেওয়া শুরু করেছে। এর একটা স্পষ্টীকরণ জরুরি।