ডলারের বাজারে সুখবর দাম কমেছে ৬-৮ টাকা

ফেব্রম্নয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। কিন্তু, রমজান শুরু হওয়ায় এবং সামনে ঈদুল ফিতর থাকায় মার্চ মাসে আরো ৫০ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিগত ১০ দিনে রেমিট্যান্সে এক মার্কিন ডলারের দর ৬ থেকে ৮ টাকা কমেছে। ডলারের দর টানা ২০ মাস ধরে অস্থিতিশীল থাকার পরে ঘটেছে এই ঘটনা। ব্যাংকাররা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রাটির চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধিই এখানে ভূমিকা রেখেছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার, রেমিট্যান্সের এক ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৪ থেকে ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। আগের সপ্তাহের ১২০ টাকার মতো উচ্চ দরের চেয়ে যা অনেকেটাই কমেছে। ফেব্রম্নয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। কিন্তু, রমজান শুরু হওয়ায় এবং সামনে ঈদুল ফিতর থাকায় মার্চ মাসে আরো ৫০ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল করতে এই প্রবণতা ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা তাদের। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্সে ডলারের দাম কমাকে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-র চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে ডলারের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে একটি ভারসাম্য আসা এই প্রবণতার পেছনে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই আমদানিকারকরা রোজার মাসে যেসব পণ্যের বহুল ব্যবহার হয়, সেগুলো মজুত করে রেখেছেন। ডলারের দাম আরও বাড়বে এমন অনুমান করেও অনেকে ঋণপত্র (এলসি)-র দায় নিষ্পত্তি করেছেন। সিনিয়র এই ব্যাংকার বলেন, 'মনে হচ্ছে শঙ্কার কালো মেঘ কেটে গেছে, এবং আশার আলো উঁকি দিচ্ছে।' তবে (মুদ্রাবাজারে) প্রকৃত স্থিতিশীলতা আসতে আরও ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় এক দশক ধরে দেশে মুদ্রার বিনিময় দর একটি স্থিতিশীল অবস্থানে ছিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যার সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে দ্রম্নত টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকে। ফলে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতি ডলারের দাম ৮৫/৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। রপ্তানিকারক, আমদানিকারক এবং রেমিট্যান্স প্রেরকদের মতো বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক বিনিময় হার বাস্তবায়ন সত্ত্বেও ডলারের বিপরীতে টাকার পতন অব্যাহত থাকে। যেমন বর্তমানে রেমিট্যান্সের এক ডলার কেনার দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকার বেশি হয়ে যাওয়ায় এই দামে কিনতে পারেনি ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালের জুন নাগাদ রেমিট্যান্সে ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ টাকা। ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যা ১১৫ টাকা পর্যন্ত ছিল। তবে আনুষ্ঠানিক হারের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনায় ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করার পর যে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়- তাতে ওই বছরের অক্টোবরেই রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের দাম ১২২ টাকা বা তারও বেশি হয়ে যায়। ফলস্বরূপ; রেমিট্যান্সেও নামে ধস। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৩৩ কোটি ডলার, যা ছিল ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মন্তব্য করেন, "২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশের মুদ্রাবাজারের বিনিময় দরে নজিরবিহীন অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ছিল যার অন্যতম কারণ। নির্বাচনের পরে বাজারে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে, তখন সংশ্লিষ্টরাও কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পান।" যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদের মতে, এখন সার্বিকভাবে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় অনেক ব্যাংকই আর চড়া দামে ডলার কিনছে না। "দাম আরও বাড়বে এই আশায় প্রবাসী বাংলাদেশিসহ যারা ডলার সঞ্চয় করে রেখেছিলেন, টাকার মূল্য বাড়তে থাকায় তাঁরাও সেসব ডলার বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন।"