চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪টি হ্যাচারিকে ২০২২ সালে এক বছরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের অনুমতি দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। তবে উৎপাদনের তুলনায় বিদেশে চাহিদা বেশি থাকায় কমে গেছে রপ্তানি। এ অবস্থায় ৫৪টির মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩০টি মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। চালু আছে ২৪টি, সেগুলোতেও উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর ডাফা ফিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড, কক্সবাজারের উখিয়ার এম কে হ্যাচারি, কলাতলী এলাকার নিরিবিলি হ্যাচারি ও খুরুশকুল এলাকার মিডওয়ে সাইন্টফিক ফিসারিজ লিমিটেড দুই বছরেও চাহিদামতো ভেনামি চিংড়ি রপ্তানি করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ২০০৬ সালে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান মাছ রপ্তানি করতো। ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭টিতে। ২০২৩ সালে রপ্তানির নিবন্ধন নেয় ২৪টি। এর মধ্যে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করতে পারছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ফিশ প্রিজারভার লিমিটেড, মাহী ফিশ কোম্পানি, মিনহার সি ফুড লিমিটেড ও মিনহার ফিশারিজ, কনসেফশন সি ফুড লিমিটেড, আকুয়া ফুড, সার অ্যান্ড কোং লিমিটেড, কুলিয়াচর সি ফুডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে চট্টগ্রামে বিশ্বমানের মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার স্থাপন করে সরকার। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ি রপ্তানি অব্যাহত রাখার জন্য চাষি পর্যায়ে রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন চিংড়ি পোনা সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। রপ্তানিযোগ্য মাছ ও চিংড়ির ভ্যালু চেইনের সব পর্যায়ে ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম কার্যকর করা হয়। চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনায় দেশে ২০২৩ সাল থেকে চাষি পর্যায়ে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রদান করা হয়।
তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে যত চিংড়ি চাষ হচ্ছে তার ৭৯ ভাগই ভেনামি চিংড়ি। এশিয়ার দেশগুলোতেও এখন যত চিংড়ি চাষ হচ্ছে তার ৮০ ভাগই ভেনামি। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারতসহ এশিয়ার ১৬টি দেশে এ প্রজাতির চিংড়ির চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চিংড়ির ৮৫ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। ১৫ শতাংশ যায় আমেরিকা, জাপানসহ অন্যান্য দেশে। তবে এসব দেশে বাগদা বা গলদার চাহিদা নেই কমে গেছে। দামের দিক থেকে বাগদার চেয়ে ভেনামির দামও অন্তত দুই ডলার বেশি।
বাংলাদেশ ইনটেনসিভ শ্রিম্প কালচার অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ বাড়ানো গেলে তা দেশের অর্থনীতিকেই পাল্টে দেবে। এ চিংড়ির চাষ হয় আধুনিক পদ্ধতিতে। বায়ো সিকিউরিটি মেনটেইন করতে হয় এবং দরকার হয় নোনা পানির। যদিও বিদেশে এখন মিষ্টি পানিতেও এর চাষ হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভেনামির বাণিজ্যিক চাষ বাড়িয়ে রপ্তানির বাজার ঠিক রাখা দরকার।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ডলারের ৪৭ হাজার ৬৩৫ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ২৫ হাজার টনের ৩০ কোটি ২ লাখ ডলারের হিমায়িত চিংড়ি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়েছে ২১৫ মিলিয়ন ডলার।
দেশে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয় ২০১৯ সালে। চার বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে মিলছে এ সুযোগ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাগদা চিংড়ির (বস্ন্যাক টাইগার) চেয়ে ভেনামির উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। সুযোগ-সুবিধা পেলে বিদেশে প্রতিযোগিতার বাজারেও টিকে থাকা যাবে।