মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় চিনি। পরে তা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করায় লাভবান হচ্ছে চোরাকারবারি ও সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। সরকার হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব।
স্থানীয়রা জানান, চিনি পাচারকারী এই চক্রের কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে চোরাইপথে কম দামে ভারতীয় চিনি এনে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্কফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কুলাউড়ার ফুলতলা, চাতলাপুরসহ সীমান্তের কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রতিদিন আনা হচ্ছে ভারতীয় চিনি। সাধারণত ভোররাতে অবৈধ চিনি আনা হয়। শমশেরনগরের স্থানীয় চোরাকাবারিসহ কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ চিনি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সীমান্ত এলাকার মানুষের দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি দিয়ে এই কারবার চালানো হচ্ছে। তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় বস্তা দিয়ে চিনি পরিবহণ করে।
এই কারবারের তথ্য পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে একটি ভারতীয় কোম্পানির ২৯০ বস্তায় মোট ১৪ হাজার ৫০০ কেজি চিনি জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শমশেরনগর বাজারের দু'জন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় চিনি কিনে বিক্রি করছি। শমশেরনগর ভেতর বাজারের এক ব্যবসায়ীর দোকান থেকে তুলনামূলক কম দামে ভারতীয় চিনি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি যদি একবার অকশনের মাল কেনেন, পরে পুরো মাস অবৈধভাবে আসা চিনি সরবরাহ করেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, যারা এই চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা করে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। তবে সমস্যা হলো, চোরাকারবারিরা অবৈধভাবে আনা চিনিগুলোর বস্তা/মোড়ক বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই পাল্টে ফেলে। ফলে তাদের ও অবৈধ পণ্যগুলো চিহ্নিত করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
কুলাউড়া উপজেলার শসসেরনগরের চাতলাপুর এলসি স্টেশন শুল্ক করিডোরের রাজস্ব কর্মকর্তা এম রেজাউল বলেন, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য জব্দ করতে আমাদের বিজিবি বাহিনী তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি আমরাও এ কার্যক্রম প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আসলে এই বিষয়টি পুলিশ দেখলে ভালো হয়। সেখানে মামলার বিষয়ও সম্পৃক্ত। তারপরও অভিযানে গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।