টাকা-ডলার অদলবদলে সুবিধা পাচ্ছে উভয় পক্ষ
প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
টাকা-ডলার অদলবদল বা সোয়াপ সুবিধা চালুর পর ১৫ দিনে ১০০ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে। এর মধ্যে বুধবার এক দিনেই যুক্ত হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই টাকা-ডলার অদলবদল সুবিধা চালুর ফলে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট রিজার্ভ বাড়লেও নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বাড়ছে না। কারণ, এই ডলার দায়হীন না। অদলবদলের সময় শেষ হলেই এসব ডলার আবার ফেরত দিতে হবে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোয়াপ সুবিধায় উপকৃত হচ্ছে ব্যাংকগুলো। কারণ, ডলার জমা রেখে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর তহবিল খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ। ব্যাংকগুলো সেই টাকা সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদে সরকারের ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করতে পারছে। পাশাপাশি এ টাকায় ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারছে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপকেরা কম খরচের তহবিল থেকে বেশি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।
এদিকে দুই বছর ধরে চলা ডলার সংকট এখনো কাটেনি। সরকারি আমদানি দায় মেটাতে আগের মতো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছিল তা এখন কিছুটা কমেছে। ফলে ডলারের দাম না বেড়ে এখন কমছে। ব্যাংকগুলো আগে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনেছে ১২০ টাকার বেশি দামে, এখন এ দাম ১১৮-১১৯ টাকায় নেমেছে। ফলে আমদানিকারকরাও আগের চেয়ে কম দামে ডলার পাচ্ছে। এ ছাড়া প্রবাসী ও রপ্তানি আয় গত মাসে বেড়েছে।
গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এ রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ডলার। এরপর ২০ ফেব্রম্নয়ারি মোট রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৩২ কোটি ডলারে। আর বিপিএম ৬ অনুযায়ী ওই দিন রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৯ কোটি ডলার। সর্বশেষ বুধবার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ডলার।
এদিকে সোয়াপ সুবিধার আওতায় বুধবার ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার জমা দিয়ে তার বিপরীতে টাকা নিয়েছে। গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি থেকে সোয়াপ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধার আওতায় এ পর্যন্ত ব্যাংক প্রায় ১০০ কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তার বিপরীতে টাকা ধার নিয়েছে। ফলে গত ১৫ দিনে প্রায় ১০০ কোটি ডলার রিজার্ভ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো সোয়াপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার জমা করলেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আমদানি দায় মেটাতে জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের কাছে সাড়ে তিন কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর ডলার জমা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকা নিচ্ছে তা সরকারি ট্রেজারি বিলে ৯১ দিনের বিনিয়োগ করলে সুদ পাচ্ছে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৪ মার্চ ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা ধার করে সরকার।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টাকা ও ডলারের তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে একরকম অস্থিরতা চলছে। যে যেভাবে পারছে টাকা খাটিয়ে মুনাফা করছে।