জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে মাসে মাসে নির্ধারণের কথা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে গত বছর এটি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে জ্বালানি বিভাগ।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার-সংক্রান্ত ১০টি বিবেচ্য বিষয় দিয়ে হিসাব-নিকাশ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর প্রকাশ করা এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী চলতি মার্চ থেকেই জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করতে হবে। নতুন সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
যদিও নির্দেশিকার কয়েকটি ধারা নিয়ে রয়েছে কিছুটা বিতর্ক। এর মধ্যে অন্যতম হলো অকটেনের মূল্য। ডিজেলের চেয়ে অকটেনের সরবরাহ মূল্য কম হলেও এ জ্বালানির দাম কমানো হবে না। বরং ডিজেলের চেয়ে ১০ টাকা বেশি রাখা হবে অকটেনের দাম। এজন্য অকটেনের দাম নির্ধারণের সূত্রে বিশেষ ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হয়েছে। একইভাবে পেট্রোলের উৎপাদন ব্যয় যাই হোক তার মূল্য অকটেনের চেয়ে চার টাকা কম হবে।
এ হিসাবে ডিজেলের সরবরাহ মূল্য ১৩০ টাকা হলে অকটেনের দাম পড়বে কমপক্ষে ১৪০ টাকা। যদি অকটেনের উৎপাদন ব্যয় কমও হয় তবু দাম ১৪০ টাকার কম হবে না। আর পেট্রোলের দাম পড়বে কমপক্ষে ১৩৬ টাকা। বর্তমানে ডিজেলের চেয়ে অকটেনের দাম ২১ টাকা বেশি। আর অকটেনের চেয়ে পেট্রোলের দাম পাঁচ টাকা কম। অর্থাৎ ডিজেল বিক্রি করা হয় ১০৯ টাকায়, অকটেন ১৩০ ও পেট্রোল ১২৫ টাকায়।
যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম কম রাখা হয়। পাকিস্তানে বর্তমানে পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ২৭৫ দশমিক ৬২ রুপি। অথচ দেশটিতে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ২৮৭ দশমিক ৩৩ রুপি। একইভাবে শ্রীলঙ্কায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৪৫৬ শ্রীলঙ্কান রুপি ও ডিজেলের দাম ৪৬৮ শ্রীলঙ্কান রুপি। এছাড়া মালয়েশিয়ায় বর্তমানে পেট্রোল ২ দশমিক ০৫ রিঙ্গিত ও ডিজেল ২ দশমিক ১৫ রিঙ্গিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশেও পেট্রোল-অকটেনের দাম কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা কৃত্রিমভাবে ডিজেলের চেয়ে বেশি রাখা হবে বলে নির্দেশিকায় বলেই দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ হতে পারে না।
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যের ওপর বিপিসি ও তেল বিতরণকারী কোম্পানির পৃথক মুনাফা মার্জিন ধরা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট-শুল্ক তো রয়েছেই। এতে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া হলো: ডিজেল কেরোসিনের স্বয়ংক্রিয় বিক্রয় মূল্য = পণ্য মূল্য+আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট+অপারেশনাল ব্যয়+আর্থিক, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়+বিপিসির মার্জিন+ভ্যাট+বিক্রয় ও বিতরণ
\হখরচ। আর অকটেনের স্বয়ংক্রিয় বিক্রয় মূল্য = পণ্য মূল্য+আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট+অপারেশনাল ব্যয়+আর্থিক, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়+বিপিসির
মার্জিন+আলফা+ভ্যাট+বিতরণ খরচ। স্বয়ংক্রিয় মূল্য কাঠামো বলতে পূর্ববর্তী মাসের বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চলমান গড়ের ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয়, সংশ্লিষ্ট সময়ের ডলারের গড় বিনিময় হার, শুল্ক-কর, বিপিসির মার্জিন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে মূল্য ঠিক করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য: আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বলতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি গেস্নাবালে প্রকাশিত মিন অব পস্ন্যাটস অ্যারাব গালফ অনুযায়ী বিপিসির আমদানি করা বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেলের মূল্যকে বোঝাবে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ব্যবহূত ক্রুড অয়েলের মূল্যকে বোঝাবে।
চলমান গড় মূল্য: চলমান গড় মূল্য বলতে আমদানি করা পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের প্রতিদিনের পস্নাটস-এ প্রকাশিত মূল্যের চলমান গড়কে বোঝাবে। তবে যেসব পণ্য ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) উৎপাদিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে ইআরএলে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় মূল্যের ভিত্তিতে নিরূপিত মূল্যকে ধরা হবে।
প্রিমিয়াম: পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির মূল্য ছাড়া অন্যান্য ব্যয়। যেমন: জাহাজ ভাড়া, ইন্সু্যরেন্স ও সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীর মার্জিনের সমন্বিত ব্যয়কে প্রিমিয়াম ধরা হবে।