প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর জানুয়ারিতে নতুন করে চা উৎপাদন শুরু করে বাগানগুলো। এ দেড় মাসে চা গাছের উপরিভাগ কেটে ফেলে নতুন কুঁড়ি উৎপাদন শুরু করা হয়। এ সময় বাগানের পরিচর্যা ও পর্যাপ্ত সেচ দেওয়া হয়। চলতি বছর নভেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় বৃষ্টিপাত হলেও জানুয়ারিতে উৎপাদন হয়েছে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও চলতি বছর রেকর্ড উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
চা বোর্ডের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে দেশের ১৬৮ চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন উদ্যোক্তারা উৎপাদন করেছে মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার কেজি চা। ২০২৩ সালে একই মাসে উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৭ হাজার কেজি চা।
বাগান ও উৎপাদনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে কৃত্রিম সেচের ওপর নির্ভরতা কমে যাওয়ায় বছরের প্রথম মাসে উৎপাদন কম হয়েছে।
চট্টগ্রামের উদালিয়া চা বাগানের কো-অর্ডিনেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'যে কোনো উৎপাদন মৌসুমের প্রথম মাসটি সারা বছরের উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরগুলোর প্রথম মাস হওয়ায় বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড চা উৎপাদন হয়েছে। এ বছরের প্রথম মাসটা খারাপ যাওয়ায় বাগানগুলোকে সতর্ক হতে হবে। প্রাকৃতিক কোনো সংকট যাতে বছরব্যাপী উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য চা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিশ্রম করতে হবে। তবে বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় শেষ পর্যন্ত এবারও রেকর্ড চা উৎপাদন করবে দেশের বাগানগুলো।'
চলতি বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। ২০২৩ সালে এক বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। যদিও ২০২৩ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্থাৎ ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন করেছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। ২০২৩ সালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে এ বছর উৎপাদন ১১ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চা উৎপাদন কম হলেও জানুয়ারিতে নিলামে চায়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। সর্বশেষ ২৭ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত ৪৪তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলামে বিক্রির জন্য চা প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩০ লাখ ৪ হাজার ৬৭৯ কেজি, যা ২০২৩ সালের ৪৪তম নিলামের চেয়ে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৪ কেজি বেশি। আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় ৪৫তম নিলামেও আগের বছরের একই নিলামের চেয়ে ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১৩৮ কেজি বেশি অর্থাৎ ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৩০ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করবে বাগান মালিকরা। পূর্ববর্তী বছরের অবিক্রীত চা সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বছরের প্রথম দিকের নিলামে বাড়তি চা সরবরাহ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ বলেন, 'বছরের প্রথম মাসে দেশে চা উৎপাদন সর্বনিম্ন হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও বছরের প্রথম মাসেই উৎপাদন হয়েছে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিবেশগত সমস্যার কারণে এ বছরের শুরুটা ভালো হয়নি।' তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও ২০২৩ সালের অভিজ্ঞতা ধরে রাখা গেলে বছর শেষে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।