বিশ্ব বাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার অন্তত আরও দুই মাসের মধ্যে কমাবে না এমন ইঙ্গিত মেলায় তেলের দাম কমেছে। শুক্রবার বিকালের দিকে ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১ দশমিক ৩৫ ডলার বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৮২ দশমিক ৩২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমকি ৩৫ ডলার বা ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৭৭ দশমিক ২৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহের ভিত্তিতেও কমতে যাচ্ছে উভয় বেঞ্চমার্কের দাম। এর আগের দুই সপ্তাহ দাম বাড়তির দিকে ছিল। তবে চাহিদা ও সরবরাহ উদ্বেগের কারণে শিগগিরই দাম আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, নীতিনির্ধারকরা সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে অন্তত আরও দুইমাস সময় নিতে পারেন। তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ার পাশাপাশি তেলের চাহিদা কমতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে কিছু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্চসুদের প্রভাবের মধ্যে এখনো তেলের দাম বেশি রয়েছে। এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে রাশিয়ার ৫০০-এরও বেশি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রম্নয়ারি) এক সাক্ষাৎকারে ডেপুটি মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি ওয়ালি অ্যাডেইমো এই তথ্য জানান। ওয়ালি অ্যাডেইমো জানান, রাশিয়ার সামরিক শিল্প কারখানা ও সেগুলোর সঙ্গে জড়িত অন্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানিও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব কোম্পানি রাশিয়াকে তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পেতে সহায়তা করে। কেন বাড়ছে না জ্বালানি তেলের দাম: এদিকে, রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এবার যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে এবং লোহিত সাগরের হামলা চলছে, তখন তেলের বাজারে তার তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না। তবে গত মাসে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শক্তিগুলো হামলা চালানোর পর তেলের দাম কিছুটা বেড়েছিল। অপরিশোধিত তেলের বাজারে অস্থিরতা আছে। কারণ হিসেবে সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ওয়ালস্ট্রিট এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছে, কবে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমানোর ঘোষণা দেবে। মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্যে তার প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা যায়; সেই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তো আছেই। গত সপ্তাহে তেলের দাম বাড়লেও এখনো তা ২০২২ সালের উচ্চতা থেকে অনেক দূরে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডবিস্নউটিআই ক্রুডের দাম গত বৃহস্পতিবার ছিল ৭৭ দশমিক ৫৯ ডলার। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মানদন্ড হিসেবে পরিচিত ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮২ দশমিক ৮৬ ডলার। তেলের দাম না বাড়ার একটি কারণ হতে পারে চাহিদা কমে যাওয়া। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) সাম্প্রতিক মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেলে নেমে আসবে, ২০২৩ সালে যা ছিল ২৩ লাখ ব্যারেল। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে অপরিশোধিত তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধি দৈনিক ১৮ লাখ ব্যারেলে নেমে আসে; আগের বছর একই সময় যা ছিল ২৮ লাখ ব্যারেল। ফেব্রম্নয়ারি মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমছে। মহামারি-উত্তর সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তেলের চাহিদা যতটা বেড়েছিল, সেই ধারায় ছেদ পড়েছে। কোনো কোনো দেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি খুবই কম। ধারণা করা হয়েছিল, কোভিডজনিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, আবাসন খাতের সংকট, ভোগব্যয় কমে যাওয়া এবং তরুণদের উচ্চ বেকারত্বের কারণে চীনের অর্থনীতি উল্টো আরও গতি হারিয়ে ফেলল। বাস্তবতা এমন পর্যায়ে গেছে যে অনেক অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন, চীন দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতার মুখে পড়েছে। অন্যান্য বড় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে মন্দার কবলে পড়েছে, অর্থাৎ পরপর দুটি প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি বা জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। একই সময় জাপান মন্দার কবলে পড়েছে। এ কারণে তারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা হারিয়ে জার্মানির পেছনে চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়ালেও এখন পর্যন্ত দেশটি মন্দার কবলে পড়েনি। তবে অনেক বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদের সতর্কবাণী, চলতি বছরের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র মন্দার কবলে পড়তে পারে। তারা বলছেন, উচ্চ নীতি সুদহার ও মহামারিকালীন সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা কমলেও সরবরাহ তুলনামূলকভাবে ভালো। সে কারণেও তেলের দামে এক ধরনের নিম্নমুখী চাপ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক গড়ে ১ কোটি ৩৩ লাখ ব্যারেল অপরিশোধ তেল ও কনডেনসেট (গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদিত তেল) উৎপাদন করেছে; ইতিহাসের কোনো সময় তারা এত তেল উৎপাদন করেনি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওপেক সদস্য দেশ জানুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি তেল উৎপাদন করেছে। যেমন ইরাক বেশি উৎপাদন করেছে দৈনিক ২ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল; সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩ লাখ ব্যারেল। আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা যতটা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সরবরাহ তার চেয়ে বেশি বাড়বে। এ কারণে তেলের দাম এক ধরনের নিম্নমুখী চাপ অব্যাহত থাকবে।