মাছচাষিরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে প্রথম ঋণ পেলেন

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
প্রথমবারের মতো দেশে ক্লাস্টারভিত্তিক তথা গুচ্ছ পদ্ধতিতে মৎস্য খাতে ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। মঙ্গলবার খুলনা নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ঋণ বিতরণ করা হয়। এ সময় খুলনার ৪৮ জন উদ্যোক্তার হাতে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণের চেক তুলে দেয় ৪৩টি ব্যাংক। ঋণের সর্বনিম্ন পরিমাণ ৩৫ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ দেওয়া হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। উদ্যোক্তারা বলছেন, বড় কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহজ শর্তে তারা এ ঋণ পেয়েছেন। ঋণের সুদের হারও তুলনামূলক কম। যারা আগে কখনো ঋণ পাননি, তারাই ঋণ পেয়েছেন। বড় কথা হলো, ঋণে কোনো হিডেন চার্জ (অলিখিতভাবে কেটে নেওয়া টাকা) নেই। ব্যাংকের এ ধরনের উদ্যোগ দেশের মৎস্য খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এতদিন বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ক্লাস্টারভিত্তিক বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে সিএমএসএমই (কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু মৎস্য খাত বরাবরই উপেক্ষিত ছিল। যে কারণে এবার মৎস্য খাতের প্রকৃত চাষিদের খুঁজে বের করে গুচ্ছ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে খুলনা জেলার মোট ৬৯ জন মাছ চাষি মোট ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলো নিজেদের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করবে। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে এক বিঘার একটি ছোট ঘের আছে রিমা বেগমের। ওই পুকুরে মাছ চাষ করতে বিভিন্ন এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতেন তিনি। রিমা বেগম বলেন, এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের সুদ অনেক বেশি। সহজ শর্তে পাওয়া যেত বলে তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। এবার আল-আরাফাহ্‌? ইসলামী ব্যাংক তাকে সহজে ও কম সুদে এক লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। ব্যাংক থেকে এত সহজে ঋণ পাওয়া যেতে পারে, তা তার কল্পনাতেও ছিল না বলে জানান তিনি। ২৫ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন কয়রা উপজেলার চিংড়িচাষি মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, আগে বেশির ভাগ ব্যাংকই মৎস্য খাতে ঋণ দিতে চাইত না। তাই স্থানীয় সমিতি থেকে মোটা সুদে ঋণ নিয়ে চাষিরা ঘের ও সাদা মাছ চাষ করতে হতো। এখন ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম চালু হওয়ায় ক্ষুদ্র চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। ঋণ বিতরণ উপলক্ষে সিএমএসএমই খাতে ক্লাস্টার অর্থায়ন বৃদ্ধিবিষয়ক একটি কর্মশালার আয়োজন করে অগ্রণী ব্যাংক। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন অগ্রণী ব্যাংকের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক এসএম হাসান রেজা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আবু সাঈদ মো. আরিফ-উল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনজুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম, অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. নূরুল হুদা ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মশিউল ইসলাম, জনতা ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুর রাজ্জাক, রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক তাজউদ্দীন আহম্মদ এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এসএম হাসান রেজা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সিএমএসএমই খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতকে এগিয়ে নিতে গুচ্ছভিত্তিক অর্থায়ন জনপ্রিয় একটি ধারণা। এতদিন মাছচাষিরা এই বাইরে ছিলেন। এখন থেকে তারাও গুচ্ছ ঋণ পাবেন। এর ফলে খুলনা অঞ্চলের তরুণ ও নারী উদ্যেক্তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন।