চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কেবল আমদানি করা পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর পর স্ক্যান করা হতো। এরপর নানা প্রক্রিয়া শেষে সেসব পণ্যভর্তি কনটেইনার ছাড় পেত। কিন্তু রপ্তানি পণ্য স্ক্যান করার সে রকম কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ স্ক্যান করার মতো কোনো স্ক্যানার ছিল না চট্টগ্রাম বন্দরে।
তাই স্ক্যানিং ছাড়াই রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজে তোলা হতো। তবে সেই সুযোগ আর থাকছে না। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে বসানো হয়েছে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার স্ক্যানার। যা চালু হয়েছে রোববার সকাল থেকেই। বলা হচ্ছে- মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য রপ্তানি ঠেকাবে এই স্ক্যানার।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) ও প্রকল্প কর্মকর্তা লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ উর রহমান খান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানিমুখী কনটেইনার পরীক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো দুটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসানো হয়েছে। একটি স্ক্যানারে ঘণ্টায় ১৫০টি কনটেইনার স্ক্যান করা সম্ভব হবে। বন্দরের তিনটি রপ্তানিমুখী গেটের মধ্যে জিসিবি-৪ এবং সিপিএআর গেটে এ দুই সেট স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এখনো সিসিটি-২ নম্বর গেটে স্ক্যানার নেই। অদূর ভবিষ্যতে এ গেটেও স্ক্যানার বসানো হবে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের চালান এই স্ক্যানারের মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। বৈধ পণ্য ঘোষণা দিয়ে অবৈধ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে কিনা, নরমাল পণ্যের ঘোষণা দিয়ে রাসায়নিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে কিনা, এক কোটি টাকার পণ্য ঘোষণা দিয়ে দুই কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে এসব স্ক্যানারের মাধ্যমে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানিমুখী কনটেইনার পরীক্ষার জন্য স্ক্যানার বসানোর মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) কোডের শর্ত পালনে আরও এক ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ঠেকানো যাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের মিথ্যা ঘোষণা, ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি, মানিলন্ডারিং ও রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাতের মতো কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিমুখী গেটে দুটি স্ক্যানার বসানোর ফলে ব্যক্তি কর্তৃক প্রচলিত কার্গো পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাসকরণ এবং মাল্টি এজেন্সি অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃক মনিটরিং করা যাবে। এর মধ্যে দিয়ে এখন থেকে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারও স্ক্যানিং শেষে জাহাজে উঠবে। এসব স্ক্যানারের সাহায্যে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০টি রপ্তানিমুখী কনটেইনার স্ক্যানিং করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নতি করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৯ সালে এই স্ক্যানার স্থাপন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে একনেক সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে দুটি স্ক্যানার ক্রয় প্রকল্পের ডিপিপি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮৯ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। পরবর্তীতে স্ক্যানার দুটি ৮৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকায় কেনার চুক্তি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য গেট আছে ১২টি। এর মধ্যে তিনটি রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য, বাকি ৯টি গেট আমদানি পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে আমদানি গেট দিয়ে রপ্তানিপণ্য এবং রপ্তানি গেট দিয়ে আমদানিপণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পণ্য ভর্তি কনটেইনার স্ক্যানিং করার জন্য সাতটি গেটে বসানো হয়েছে স্ক্যানার মেশিন। এখনো বন্দরের তিনটি গেটে স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়নি। একইভাবে তিনটি রপ্তানিমুখী গেটের মধ্যে ৪ নম্বর গেট ও সিপিএআর গেটে স্ক্যানার দুটি বসানো হয়। রপ্তানিমুখী গেটের মধ্যে স্ক্যানার নেই সিসিটি-২ নম্বর গেটে।