বছরজুড়ে নিম্নমুখী থাকবে তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক বাজার
অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল বন্দর থেকে রপ্তানিযোগ্য তাপীয় কয়লার ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তির দাম সম্প্রতি কমে তিন বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। প্রতি টন লেনদেন হচ্ছে ১১৮ ডলারে, যা ২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন
প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে কয়লার সরবরাহ চাহিদার চেয়েও বেশি। তার ওপর এবার শীতের তীব্রতা কম থাকায় হিটিং জ্বালানি হিসেবে এটির ব্যবহার কমেছে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় শীত শেষ হয়ে এলে যা আরও কমে যেতে পারে। বাড়তি সরবরাহের বিপরীতে ব্যবহার কমায় চলতি বছরজুড়ে তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল বন্দর থেকে রপ্তানিযোগ্য তাপীয় কয়লার ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তির দাম সম্প্রতি কমে তিন বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। প্রতি টন লেনদেন হচ্ছে ১১৮ ডলারে, যা ২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। চীনের বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহকে সাম্প্রতিক এ মূল্য হ্রাসের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে দাম কমেছে ৫৫ শতাংশ।
গবেষণা সংস্থা বিএমআই (ফিচ সলিউশনের একটি ইউনিট) জানায়, সংস্থাটি চলতি বছরের জন্য নিউক্যাসেল তাপীয় কয়লার মূল্য পূর্বাভাস সংশোধন করে কমাচ্ছে। প্রতি কেজিতে ছয় হাজার কিলো ক্যালরিসমৃদ্ধ কয়লার বার্ষিক গড় দাম টনপ্রতি ১৭০ থেকে কমিয়ে ১৫০ ডলার ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান অফিস অব দ্য চিফ ইকোনমিস্টের (এওসিই) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ নিউক্যাসেল তাপীয় কয়লার গড় মূল্য নামতে পারে টনপ্রতি ১১৫ ডলারে, গত বছর যা ছিল ১৭৩ ডলার। তবে ২০১৯ সালের গড় দামের চেয়ে বাজার অনেকটা উঁচুতেই অবস্থান করবে। ওই বছর প্রতি টন লেনদেন হয়েছিল ৭৬ ডলারে।
বিএমআই জানায়, পর্যাপ্ত সরবরাহের বিপরীতে বিশ্ববাজারে কয়লার চাহিদা কম। ফলে চলতি বছর দাম ২০২২ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও নিচে নামতে পারে। ওই বছর প্রতি টন তাপীয় কয়লার গড় মূল্য ছিল ৩৫৮ ডলার।
এওসিই পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বর্তমানে বাজার বিদ্যমান সব নির্দেশকই দাম কমার দিকে ইংগিত করছে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় শীত শেষ হলে কয়লার চাহিদা আরও নিম্নমুখী চাপে পড়বে। চলতি বছরের প্রথমার্ধেই দাম উলেস্নখযোগ্য হারে কমবে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানায়, চলতি বছর চীনে জলবিদু্যৎ উৎপাদন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি সৌর ও বায়ুবিদু্যৎ উৎপাদনও বাড়ছে। ফলে এ সময় দেশটিতে কয়লার ব্যবহার কমবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিশ্বের মধ্যে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহার হয়। ভারত ও চীনসহ অঞ্চলটিতে ?জ্বালানিটির উত্তোলন লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়ছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে কয়লার ওপর নির্ভরশীল থাকবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএমআই জানায়, ২০২৪ সালে তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক ব্যবহার গত বছরের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে। এটির উত্তোলন বাড়তে পারে ৩ শতাংশ। ফলে বাজারে জ্বালানিটির উদ্বৃত্তের আকার বড় হবে।
২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা রপ্তানি হয়েছে। ওই বছর প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১০০ কোটি টন ছাড়িয়ে যায়। মূলত বিদু্যৎ গ্রিডে জ্বালানিটির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে রপ্তানিতে এমন উলস্নম্ফন দেখা দিয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলো এখনো জ্বালানি হিসেবে কয়লার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এটির ব্যবহার রোধে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় নীতিগত চাপও কম। ব্যাপক মজুদের পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এ অঞ্চলের বিদু্যৎ খাতে জ্বালানি চাহিদার বড় একটি অংশই পূরণ করে কয়লা। ফলে এখানে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন এবং রপ্তানি দুটোই বাড়ছে সমানতালে।
বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটি ৪০ লাখ টন তাপীয় কয়লা রপ্তানি হয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় রপ্তানি ৬ কোটি ২৫ লাখ টন বা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।