ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে নতুন নির্দেশনা
ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১৫ এর উপধারা (৯) এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, 'স্বতন্ত্র পরিচালক' বলতে 'এইরূপ ব্যক্তিকে বুঝাইবে যিনি ব্যাংক-কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারধারক হতে স্বাধীন এবং যিনি কেবল ব্যাংক-কোম্পানির স্বার্থে স্বীয় মতামত প্রদান করিবেন।
প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকিং বা পেশায় দায়িত্ব পালনকালে কোনো অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত, ঋণ খেলাপি, আদালতের মাধ্যমে দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো।
১৪ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক-কোম্পানিতে 'স্বতন্ত্র পরিচালক' নিয়োগ এবং তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও সম্মানী সম্পর্কে নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়ন এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম সুচারুভাবে করা, ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তির সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া অপরিহার্য। ব্যাংকের অর্থ সংগ্রহের প্রধান উৎস হলো আমানতদারীদের অর্থ জমা রাখা। ফলে আমানতদারীদের আস্থা অর্জন ও বজায় রাখা একটি ব্যাংক-কোম্পানির জন্য অপরিহার্য। ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে স্বাধীনভাবে এবং কেবল ব্যাংকের আমানতদারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়-দায়িত্ব অপরাপর পরিচালকদের তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। স্বার্থের সংঘাত পরিহার করে আমানতদারীর স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যাংক-কোম্পানির জন্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা আবশ্যক। এসব উদ্দেশ্য পূরণ করতে ব্যাংক কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং তার বা তাদের দায়-দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারণে ব্যাংকগুলোর অনুসরণীয় নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালায় স্বতন্ত্র পরিচালকের সংজ্ঞা, পরিচালকের সংখ্যা, যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কার্যক্রম, সম্মানীসহ নানা বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
স্বতন্ত্র পরিচালকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১৫ এর উপধারা (৯) এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, 'স্বতন্ত্র পরিচালক' বলতে 'এইরূপ ব্যক্তিকে বুঝাইবে যিনি ব্যাংক-কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারধারক হতে স্বাধীন এবং যিনি কেবল ব্যাংক-কোম্পানির স্বার্থে স্বীয় মতামত প্রদান করিবেন। ব্যাংকের সহিত কিংবা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সহিত যার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কোনো প্রকৃত স্বার্থ কিংবা দৃশ্যমান স্বার্থের বিষয় জড়িত নেই।
স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যায় বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনূ্যন তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ কোনো ব্যাংক- কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক থাকবেন। তবে কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা ২০ জনের নিচে হলে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা অনূ্যন দু'জন হবে।
স্বতন্ত্র পরিচালকদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নূ্যনতম ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নূ্যনতম বয়স ৪৫ এবং সর্বোচ্চ বয়স হবে ৭৫ বছর। এ ছাড়া একাডেমিক শিক্ষার যোগ্যতাও নীতিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে।
মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক ফৌজদারি কোনো অপরাধে দন্ডিত, জাল জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত, ঋণ খেলাপি, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।
আর্থিক সুবিধাদির বিষয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালকরা প্রতি মাসে স্থায়ী সম্মানী হিসেবে ৫০ হাজার টাকা (প্রযোজ্য কর কর্তন সাপেক্ষে) পাবেন, পরিচালনা পর্ষদ বা সহায়ক কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানী হিসেবে পাবেন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। তবে যত সভা হোক না কেন, প্রতি মাসে সর্বোচ্চ পরিচালনা পর্ষদের দু'টি, নির্বাহী কমিটির চারটি, অডিট কমিটির একটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভায় উপস্থিতির জন্য আলোচ্য সম্মানী পাবেন স্বতন্ত্র পরিচালকরা। ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ১৫(৯) ধারায় ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।