চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে বন্ডের পরিবর্তে আমদানি করব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে
প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
লিড টাইম কমাতে (ক্রয়াদেশপ্রাপ্তি থেকে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) শুল্কমুক্ত-সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউসের পরিবর্তে সবার জন্য সমহারে আমদানি কর ১ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে চামড়াজাত পণ্য ও জুতা উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (এলএফএমইএবি)। তারা বলছে, এটি করা গেলে লিড টাইম ২০ দিন কমবে। এতে রপ্তানি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ ছাড়া নতুন, ক্ষুদ্র বা মাঝারি রপ্তানিকারক যে কেউ কাঁচামাল সহজেই পেয়ে যাবে।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য এই প্রস্তাব দিয়েছে এলএফএমইএবি। ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যালয়ে সোমবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে প্রাক্?-বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও পরিচালক অমৃতা মাকিন ইসলাম।
চামড়া খাতের মূল সমস্যা পরিবেশদূষণ। এ জন্য বিশ্ববাজারে বড় বাজার ধরতে পারছে না খাতটি। কমপস্নায়েন্সের বিষয়ে উন্নতি হলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়বে।
বন্ড ব্যবস্থার পরিবর্তে আমদানি করের সমহার প্রস্তাবের বিষয়ে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে জটিল। সব উৎপাদক ও রপ্তানিকারক এই সুবিধা নিতে সক্ষম নয়। তবে আমদানিতে সমান কর প্রবর্তন করা গেলে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য গেম চেঞ্জার হতে পারে। একই সঙ্গে তারা বলছে, বিগত অর্থবছরের বাজেটে কমন বন্ডেড ওয়্যারহাউস পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এটি করা গেলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও বন্ড সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আমদানি সহজ, আমদানি ব্যয় হ্রাস ও লিড টাইম কমে আসবে। বর্তমানে ভারত ও চীনে এই পদ্ধতি রয়েছে, যা তাদের রপ্তানি বিকাশে ভূমিকা রাখছে।
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে।
বাজেট আলোচনায় এলএফএমইএবি নেতারা বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। অন্যদিকে দেশের বিদু্যতের দাম, ব্যাংকের সুদের হার ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ অনেক গুণ বেড়েছে। সেই তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি। আবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণে জাহাজগুলোর জ্বালানি খরচ সাড়ে ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
আগামী তিন বছরের জন্য চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, এই সুবিধা পেলে রপ্তানির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে।
এ ছাড়া চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর স্থায়ীভাবে মওকুফ করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, এই খাতে নগদ সহায়তা আগে ছিল ১৫ শতাংশ। এখন সেটি কমিয়ে করা হচ্ছে ১২ শতাংশ। উৎসে কর কাটার পর রপ্তানিকারকরা পাবেন ১০ দশমিক ৮ শতাংশ সহায়তা। সরকার নীতিসহায়তার অংশ হিসেবে রপ্তানির জন্য ভর্তুকি দেয়। তাই এই সহায়তার ওপর উৎসে কর কর্তন যৌক্তিক হতে পারে না।
একই সভায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান আগামী বাজেটে বাস্তবায়নে জন্য চামড়া খাতের কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট কমানো দরকার।
রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করলে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় রপ্তানি বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) রাসায়নিক ও যন্ত্রাংশ বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, চামড়া খাতের মূল সমস্যা পরিবেশদূষণ। এ জন্য বিশ্ববাজারে বড় বাজার ধরতে পারছে না খাতটি। কমপস্নায়েন্সের বিষয়ে উন্নতি হলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। সেটি হলে শুল্ক কমানোর দাবি-দাওয়া নিয়ে এভাবে আসতে হবে না।