মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধের প্রভাব মসলার বাজারে

বাংলাদেশে বছরে আদার চাহিদা ৪.৫ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ টনের কম। বাকি চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। আমদানির বেশিরভাগই আসে চীন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে প্রায় দু-মাস ধরে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি নিম্নমুখী। টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের শুরু থেকে এই আমদানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে, বিশেষ করে মসলা বাজারে। মূলত টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত বাংলাদেশে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আমদানি হয়। এর বাইরে মাছ, কাঠ, আচার, মসলা, নারকেল, ইলেকট্রিক পণ্যসহ নানা পণ্য দেশে আসে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বছরে আদার চাহিদা ৪.৫ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ টনের কম। বাকি চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। আমদানির বেশিরভাগই আসে চীন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে। এর মধ্যে আবার আমদানির সিংহভাগ আদাই আসে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমার থেকে ২০-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসেই ৮০ হাজার ২১৮ টন আদা আমদানি হয়। একই সময় প্রায় ৬০০ টন রসুন আমদানি হয় দেশটি থেকে। এদিকে জানুয়ারির শুরু থেকেই দেশের বাজারে আদার দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। গত দেড় মাসে খুচরা বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রকি কেজিতে প্রায় ৮০ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে। যা জানুয়ারির শুরুতে ১৯০ থেকে ২শ' টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। একই অবস্থা পেঁয়াজ ও রসুনের বাজারে। সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা এবং রসুনের কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ টাক। বর্তমানে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৩০ ও ২৫০ টাকা দরে। টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা ইউনাইটেড টেকনাফ লিমিটেডের তথ্যানুযায়ী গত ১৩ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারে লড়াই শুরু হলেও সম্প্রতি এর তীব্রতায় ডিসেম্বর থেকেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কমতে থাকলেও বর্তমানে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি হয় আদা, বর্তমানে এই পণ্যটির আমদানি পুরোপুরি বন্ধ। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সাধারণত আলু, খেলনা, পস্নাস্টিক সামগ্রী, পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়। তবে রপ্তানির পরিমাণ সামান্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ০.০৪ লাখ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ০.০৩ লাখ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ০.১১ লাখ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর বিপরীতে একই সময় যথাক্রমে ১.৯৮ লাখ টন, ০.৭৫ লাখ টন এবং ২.৩৩ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ পথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়, চোরাচালানের মাধ্যমেও প্রায় সমপরিমাণ পণ্য দেশটি থেকে বাংলাদেশে ঢোকে। গত নভেম্বর থেকে রাখাইনের বিভিন্ন শহরে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এই লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ার কারণে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) অনেক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেক আমদানিকারককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ অনেকে ব্যাংক ড্রাফট করলেও মিয়ানমারের অস্থিরতার কারণে পণ্যগুলো মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করতে পারছেন না। তিনি জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ঋণপত্র (এলসি) ব্যবস্থায় আমাদনি-রপ্তানি কার্যক্রম হয় না। দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালিত হয় ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে। মিয়ানমারে এখন ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকায় চাইলেও ব্যাংক ড্রাফট করা যাচ্ছে না। এজন্য দেশটি থেকে একেবারেই আমদানি করা যাচ্ছে না। তবে অনেক ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে এক-দুটি ট্রলার পাঠাচ্ছেন, যা একেবারেই নামমাত্র। এর ফলে টেকনাফ বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রম্নয়ারি নারকেল, শুঁটকি মাছসহ অন্যান্য পণ্য নিয়ে একটি ট্রলার মিয়ানমার থেকে এ বন্দরে এসেছে বলে জানান জসিম। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ আদা আমদানি হয়, সেটি এখন বিকল্প দেশ থেকে আনতে হবে। তা না করতে পারলে বাজারে একটা বড় অস্থিরতা তৈরি হয়ে পারে। কারণ লম্বা সময় ধরেই আদার আমদানি বন্ধ। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আদার সরবরাহ, বাজারদর স্বাভাবিক রাখতে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য।