বাজেটে ৬০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে

চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিদেশি সহায়তাও কমে আসছে। এসব কারণে বাজেট বাস্তবায়নও কম হচ্ছে

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
নানা কারণে খানিকটা অর্থ সংকটে পড়েছে সরকার। এই কারণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস্তবতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বেশ বড় মাত্রায় কাটছাঁট করা হচ্ছে। এই পরিমাণ হতে পারে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অংশে কমানো হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং ৩২ হাজার কমবে নন-এডিপি অংশে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিদেশি সহায়তাও কমে আসছে। এসব কারণে বাজেট বাস্তবায়নও কম হচ্ছে। বাজেটে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প (পিপিপি), ব্যাংক পুনর্ভরন খাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তাই এই খাতে আর অর্থ ব্যয় করতে হবে না। একই সঙ্গে সরকার যে কৃচ্ছতা নীতি অবলম্বন করছে, তার ফলেও বছর শেষে সাশ্রয় হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে বাজেট কাটছাঁট করলেও চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার কমবে মূল বাজেটের চেয়ে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। আগামী মার্চ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির সভায় বাজেট সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানায়, চলতি বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এই টার্গেট এখন কমিয়ে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বছর শেষে এটি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এটি ৭ শতাংশের ওপরেই থাকবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এখন এই জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ শতাংশ হ্রাস করে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শুধু যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হয়েছে তা-ই নয়, একই সঙ্গে মূল বাজেটের আকারও কাটছাঁট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমহীনতার কারণে এখন তা কমিয়ে ৭ লাখ ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে আগামী জুন থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত বাজেট থেকে ৫ দশমিক ৬ ভাগ বেশি। উলেস্নখ্য, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে, ডিসেম্বর মাসেই ঘাটতি ৬ হাজার ৭৮২ কোটি ২১ লাখ টাকা। যদিও ছয় মাস শেষে রাজস্ব বিগত অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৮ ভাগ অর্জিত হলেও বড় ঘাটতি এড়াতে পারেনি সরকারি সংস্থাটি। জানা গেছে, ছয় মাসে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।