রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন উচ্চতায় স্বর্ণের চাহিদা

গত বছর বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের মোট চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৮৯৯ টন, যা ২০২২ সালে ছিল ৪ হাজার ৭৪১ টন। এক বছরের ব্যবধানে চাহিদা বেড়েছে ৩ শতাংশ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন উচ্চতায় স্বর্ণের চাহিদা

গত বছর বিশ্বজুড়ে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও জুয়েলারি ব্যবহারে কোনো উত্থান-পতন পরিলক্ষিত হয়নি।

২০২৩ সালে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। অব্যাহত ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চীনে দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ওই বছর বিনিয়োগকারীদের কাছে ধাতুটির কদর ছিল অনেক বেশি। চলতি বছরও চাহিদা লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডবিস্নউজিসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, ওটিসি বা ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট এবং এক্সচেঞ্জগুলোর মজুত প্রবাহসহ গত বছর বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের মোট চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৮৯৯ টন, যা ২০২২ সালে ছিল ৪ হাজার ৭৪১ টন। এক বছরের ব্যবধানে চাহিদা বেড়েছে ৩ শতাংশ।

ওটিসি বা ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট বলতে মূলত এমন বিকেন্দ্রীকৃত বাজারকে বোঝায়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট কোনো এক্সচেঞ্জের পরিবর্তে সরাসরি নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্পাদন করে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণ কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওটিসি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ?ভূমিকা রয়েছে।

বাজার পর্যবেক্ষরা বলছেন, গত বছর স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে তিনটি বিষয়। এগুলো হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-হামাস সংঘাত ও চীনের অর্থনীতিতে ধীরগতি। এসব কারণে চলতি বছরও ধাতুটির চাহিদা ও দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

তথ্য বলছে, গত বছরের ডিস্বেম্বরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। প্রতি আউন্সের মূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার ১০০ ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কেনার পরিমাণ বিপুল মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়ায় বাজারদরে দেখা দেয় এমন উলস্নম্ফন। টানা দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এক হাজার টনের বেশি স্বর্ণ কিনছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত বছর পিপলস ব্যাংক অব চায়না ছিল স্বর্ণের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ব্যাংকটি ওই সময় ২২৫ টন স্বর্ণ ক্রয় করে। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংকে ধাতুটির মজুত ২ হাজার ২৩৫ টনে উন্নীত হয়।

ডবিস্নউজিসির বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বাড়লে সে দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। চীনের ক্ষেত্রেও সেটিই ঘটেছে। তাছাড়া দেশটির বিপর্যয় প্রপার্টি খাতও বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণ ক্রয়ে উৎসাহিত করেছে। সেখানে গত বছর স্বর্ণের বার ও মুদ্রায় বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেড়ে ২৮০ টনে উন্নীত হয়। চীনের বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে অন্যান্য সম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমন বাস্তবতায় তারা নিজেদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে স্বর্ণের বাজারে ঝুঁকছেন।

ডবিস্নউজিসি জানায়, চলতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণ কেনার হার কিছুটা ধীর হয়ে পড়তে পারে। তবে তা ২০২২ সালের তুলনায় বেশিই থাকবে। গত বছর বিশ্বজুড়ে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও জুয়েলারির ব্যবহারে কোনো উত্থান-পতন পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ চীনে জুয়েলারির চাহিদা কভিড-১৯ পূর্ব অবস্থায় ফিরেছে।

চীন গত বছর ভারতকে পেছনে ফেলে জুয়েলারির শীর্ষ ক্রেতা দেশে পরিণত হয়। এ সময় চীন ৬০৩ টন স্বর্ণ ক্রয় করে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।

বিশ্বজুড়ে ২০২৩ সালে স্বর্ণের বার ও মুদ্রা কেনাবেচার পরিমাণ কমেছে ৩ শতাংশ। অন্যদিকে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড থেকে স্বর্ণের বহিঃপ্রবাহ টানা তৃতীয় বছরের মতো কমল। এক বছরের ব্যবধানে ধাতুটির বৈশ্বিক উত্তোলন বেড়েছে ১ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে