ডলার সংকট
সৌদি আরবের 'সহায়তা চেয়েছে' বাংলাদেশ
আমরা সৌদি থেকে জ্বালানি আমদানিতে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় পাই। কিন্তু ডলারের কারণে আমরা তাদের বলেছি, আমাদের যদি এক বছর সময় দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। তারা বলেছে, তারা সেটি বিবেচনা করবে
প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দেশের চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় সৌদি আরবের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
সৌদি আরবে তিন দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমরা সৌদি থেকে জ্বালানি আমদানিতে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় পাই। কিন্তু ডলারের কারণে আমরা তাদের বলেছি, আমাদের যদি এক বছর সময় দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। তারা বলেছে, তারা সেটি বিবেচনা করবে।'
তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানায় নতুন বিনিয়োগ করতে চায় বলেও তথ্য দেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'তারা বলছে, এখানে আমরা ভাবছি গ্যাস আছে। কিন্তু ড্রিলিং না করা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমরা এখানে নতুন বিনিয়োগ করতে চাই। তারা গভীর সমুদ্রে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানেও আগ্রহী। আমাদের অর্থনৈতিক যে উন্নতিটা হবে, সেখানে জ্বালানি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পায়রায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলেও জানান সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশে সৌদি আরবকে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল দিতে চাই। তাদের বিনিয়োগ মন্ত্রী পায়রায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।'
এ ছাড়া সৌদি আরবে দুই দেশের যৌথ মালিকানায় একটি ইউরিয়া সার কারখানা করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সারের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা পূরণেই এই উদ্যোগ।
'সৌদিতে জয়েন্ট ভেনচারে আমরা একটি ইউরিয়া সার কারখানা করব। উৎপাদিত ইউরিয়ার শতভাগ আমরাই আমদানি করে নিয়ে আসব। তারা প্রস্তাবটি নিয়ে আগাতে চায়। মার্চ মাসের মধ্যে এটার সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হবে। শুধু সরকার টু সরকার নয়, এখানে বেসরকারি খাতেরও যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।'
এই সফরে মুসলিম বিশ্বের ৪১টি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত সামরিক জোট ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেরোরিজম কোয়ালিশনের (আইএমসিটিসি) বৈঠকেও অংশ নেন সালমান এফ রহমান।
সেই সভায় 'কিছু বিষয়ে ঐকমত্য' হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ইসলামের নামে যে সন্ত্রাসবাদ হয়, সেটার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। সন্ত্রাস, সন্ত্রাসই। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। ইসলামের বদনাম করার জন্য তারা এসব করে। এই সংস্থার মাধ্যমে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে যে সহযোগিতা আছে, সেটি আরও বেগবান করার বিষয়ে সবাই একমত।'
'ফিলিস্তিন এবং গাজায় যা হচ্ছে, সেখানে সবাই জোরালোভাবে নিন্দা জানিয়েছে এবং সমস্যার সমাধান করতে বলেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা কাজ করবে।'
সালমান এফ রহমান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়েও সৌদি আরব বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
মূলত তারা বাংলাদেশে সবজি, মাছ বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করবে, তারা সেটি তাদের দেশে নিয়ে যাবে। তারা ফিজিবলিটি স্টাডি করে দেখবে, বাংলাদেশে কোন ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের ও সৌদি আরবের ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গবেষণা করে লং গ্রেড রাইস উৎপাদনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।'
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে এবার আইএমসিটিসির বৈঠকে যোগ দেন সালমান এফ রহমান। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সমন্বিত করণীয় বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের দ্বিতীয় সভা হয় এবার। এ ছাড়া সৌদি আরবে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে সে দেশের জ্বালানি মন্ত্রী, বিনিয়োগ মন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সালমান এফ রহমান।