রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আইইএর পূর্বাভাস

প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে পারে ২.৫ শতাংশ

কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক সরবরাহে টান পড়ে। এক সময় রুশ গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইউরোপের দেশগুলো
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে পারে ২.৫ শতাংশ

প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক দাম ২০২২ সালে বেড়ে ইতিহাসের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এতে চাহিদায় ধস নেমেছিল। তবে গত বছর জ্বালানিটির বাজারদর কমেছে লক্ষণীয় মাত্রায়। এতে চাহিদা ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। চলতি বছর এটির চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। তবে এটির সরবরাহ এখনো সংকোচনের মুখে আছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক সরবরাহে টান পড়ে। এক সময় রুশ গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইউরোপের দেশগুলো। ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় গ্যাস আমদানিতে রাশিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ইউরোপ। অঞ্চলটির ক্রেতারা ?বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে লাগামছাড়া হয়ে ওঠে পণ্যটির বাজার।

এদিকে আকাশচুম্বী দামের কারণে শিল্পসহ সব খাতেই গ্যাসের চাহিদা কমে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে দামও। এমনকি ২০২৩ সালে এ প্রবণতায় ছিল গ্যাসের বৈশ্বিক বাজার। নিম্নমুখী দামের কারণে ফের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে শিল্প খাত জ্বালানিটির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়াতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য প্রকাশিত গ্যাসের বাজার প্রতিবেদনে আইইএ জানায়, এ বছর জ্বালানিটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ১৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

সংস্থাটি জানায়, এশিয়া প্যাসিফিকের দ্রম্নতবর্ধনশীল বাজারগুলোয় চাহিদা প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত শক্তিশালী হবে বলে প্রত্যাশা। এছাড়া আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের গ্যাসসমৃদ্ধ দেশগুলোয়ও জ্বালানিটির ব্যবহার উলেস্নখযোগ্য হারে বাড়বে।

এদিকে এশিয়া ও ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কিছুটা মন্থর থাকবে বলেও জানিয়েছে আইইএ। চাহিদা বাড়তে পারে আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সংস্থাটির বিশ্লেষকরা জানান, বিশ্বজুড়ে এ বছর এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে পড়তে পারে, যা এশিয়া ও ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস দিলেও বাজার ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এটির প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন লিকুইফ্যাকশন পস্ন্যান্ট চালু হতে দেরি হওয়া, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, নির্দিষ্ট লিগ্যাসি প্রজেক্টে ফিড গ্যাসসংক্রান্ত জটিলতা, রপ্তানিসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জসহ সব ধরনের ঝুঁকিই রয়েছে গ্যাসের বাজারে। এসব কারণে চলতি বছর জ্বালানিটির বাজার অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। বাড়তি চাহিদার বিপরীতে সংকুচিত সরবরাহ মূল্যের উত্থান-পতনে বড় ভূমিকা রাখবে।

২০২২ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছিল। তবে এখন পণ্যটির দাম সে তুলনায় অনেক কম। এসঅ্যান্ডপি গেস্নাবাল কমোডিটি ইনসাইটসের মূল্যায়ন অনুযায়ী, গত ২৫ জানুয়ারি ফ্রন্ট মান্থ চুক্তিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ডাচ বাজার আদর্শ টিটিএফের দাম মেগাওয়াট/ঘণ্টাপ্রতি (কখনো কখনো গ্যাসের মূল্য মেগাওয়াট/ঘণ্টায় নির্ধারণ করা হয়) দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৫৩ ইউরোয়। ২০২২ সালের আগস্টে যা ছিল রেকর্ড ৩১৯ দশমিক ৯৮ ইউরো। অন্যদিকে ২৫ জানুয়ারি পস্নাটস বাজার আদর্শ জাপান কোরিয়া মেকার বা জেকেএমের দাম ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৯ ডলার ৫৪ সেন্ট। ২০২২ সালের মার্চে যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। প্রতি এমএমবিটিইউ লেনদেন হয়েছিল ৮৪ ডলার ৭৬ সেন্টে।

আইইএ জানায়, ২০২২ সালে রেকর্ড সর্বোচ্চ ওঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত গ্যাসের দাম ব্যাপক কমেছে। ফলে বাড়ছে চাহিদা। এমনকি প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারদর ঐতিহাসিক গড়ের কাছাকাছি অবস্থান করলেও মূল্য সংবেদনশীল শিল্প খাতে এটির চাহিদা ঘুরে দাঁড়াবে।

আইইএর এনার্জি মার্কেটস অ্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালক কেইসুক সাদামোরি বলেন, '?অব্যাহত জ্বালানি সংকটের পর গ্যাসের বাজার একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। আর সরবরাহ ও চাহিদা- উভয় ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। আমরা চলতি বছর গ্যাসের চাহিদায় শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি। কারণ এখন দাম তুলনামূলক সহনীয়। তবে চাহিদা বৃদ্ধির গতি ধীর থাকবে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

আইইএ জানায়, চলতি বছর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে, যা ২০১৬-২০ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে ৮ শতাংশ কম। চলতি বছর গ্যাসের বাজারে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও পাইপলাইনসহ এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিয়ে উদ্বেগ বাজারকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে