ইস্পাতের বাজারে অস্থিরতা
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের প্রতিটন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার টাকা দামে। যা নির্বাচনের আগে ছিল টনপ্রতি ৯০ থেকে ৯১ হাজার টাকা
প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
'আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের বুকিং দর বৃদ্ধি, ডলার সংকটের কারণে পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ার কারণে ইস্পাতের কাঁচামালের দাম টনপ্রতি ৮১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।'
মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এমএস (মাইল্ড স্টিল) রডের দাম টনপ্রতি প্রায় চার হাজার টাকা বেড়েছে। উৎপাদনকারীরা এর জন্য গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের বুকিং দরের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি এবং ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।
ইস্পাত কারখানাগুলোর তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের প্রতিটন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার টাকা দামে। যা নির্বাচনের আগে ছিল টনপ্রতি ৯০ থেকে ৯১ হাজার টাকা।
৭৫ গ্রেডের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রডের মধ্যে বর্তমানে প্রতিটন বিএসআরএম ৯৫ হাজার টাকা, জিপিএস সাড়ে ৯৩ হাজার টাকা, কেএসআরএম ও একেএস ৯৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বাজারে প্রতিটন বিএসআরএম সাড়ে ৯১ হাজার টাকা, জিপিএস সাড়ে ৯০ হাজার টাকা এবং কেএসআরএম ও একেএস ৯০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতো।
ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এখনো অনেক সরকারি প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি। এছাড়া বেসরকারি বড় আবাসন-বাণিজ্যিক প্রকল্পের কাজও অনেকটা স্থবির। তারা বলছেন, রডের চাহিদা ও বিক্রি দুটোই বর্তমানে কম।
\হদেশের শীর্ষ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেন গুপ্ত বলেন, ইস্পাত খাত এখন সংকটপূর্ণ সময় পার করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের বুকিং দর বৃদ্ধি, ডলার সংকটের কারণে পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ার কারণে ইস্পাতের কাঁচামালের দাম টনপ্রতি ৮১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গিয়ে তিনগুণ বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।
'নির্মাণ মৌসুম শুরু হলেও এ বছর রডের চাহিদা ও বিক্রির পরিমাণ খুবই কম। ফলে রডের দাম কিছুটা বাড়লেও এই দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি নয়,' বলেন তিনি।
এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে এই শিল্পে সংকট লেগে আছে। ডলার সংকটের কারণে এখন চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। ফলে ইস্পাতের কাঁচামাল আমদানি চাহিদার তুলনায় কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
সহসা এই সমস্যা না কাটলে কয়েক মাস পর কাঁচামালের তীব্র সংকট হতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ এলাকার রড ব্যবসায়ী ও মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এসএম কামরুজ্জামান বলেন, প্রায় দুই মাস নিম্নমুখী থাকার পরে নির্বাচনপরবর্তী সময়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে রডের বাজারদর।
'বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম ও ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই রডের দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু বাজার তার চেয়ে বেশি অস্থির হয়েছে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কথিত সিন্ডিকেট করে কারসাজির কারণে,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এক সময় শুধু চট্টগ্রামেই ছোট-বড় দেড়শ রড উৎপাদনকারী কারখানা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সংকটের কারণে গত কয়েক বছরে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
'এখন রডের পুরো বাজার ১০১২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি। ফলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সিন্ডিকেট করে পণ্যটির দাম অস্থির করার সুযোগ পাচ্ছে,' বলেন কামরুজ্জামান।
বর্তমানে অটো মিলের ৬০ গ্রেডের মধ্যে প্রতিটন গোল্ডেন ইস্পাত ও এইচএম স্টিল-এর এমএস রড ৯০ হাজার টাকা, বায়েজিদ স্টিল ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা, কেআর স্টিল ও এস এস টাইগার ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।