পুঁজিবাজারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সূচক ও লেনদেন বাড়ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে বিগত সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দরসীমা) তুলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেই ধকল সামলাতে পারছে না বাজার। লেনদেন বাড়লেও সূচক ধারাবাহিকভাবে কমছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী সপ্তাহে অর্থাৎ ২১-২৫ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৮০ পয়েন্ট পতন হয়েছে। যদিও লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৮৫২ কোটি টাকারও বেশি।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত সপ্তাহে লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় এক হাজার ২১৪ কোটি টাকা বেড়েছে। দৈনিক গড় লেনদেন ৭২৭ কোটি থেকে বেড়ে ৯৭০ কোটি টাকায় উঠে এসেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট মোট চার হাজার ৮৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে চার দিনে মোট তিন হাজার ৬৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ২১৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৮০.৩৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬,১৫৬.৪১ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্ সূচক ৩৬.০১ পয়েন্ট কমে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৫.১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১,৩৫২.২৯ পয়েন্টে এবং ২,১১৪.৬১ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ৪০৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ৭৪টির দর বেড়েছে, ৩০৮টির দর কমেছে, ১৪টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১১টির লেনদেন হয়নি।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) সামান্য কমেছে। তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৩.২৯ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে ১২.৩৯ তা পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৪ কোটি ২০ লাখ ২৫ হাজার ৮৮০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ছিল ১৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২.৮৬ শতাংশ।
লেনদেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৪০৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৩১ কোটি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৭২ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ২ কোটি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৮১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১১৫ কোটি ৯২ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৩৯ শতাংশ।
এছাড়া সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ৯৮ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার, দেশবন্ধু পলিমারের ৯৭ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকার, কর্ণফুলী ইন্সু্যরেন্সের ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকার, লাফার্জহোলসিমের ৮২ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশেনের ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার, ব্র্যাক ব্যাংকের ৮০ কোটি ৫০ লাখ ২ হাজার টাকার এবং সি পার্ল রিসোর্টের ৭৭ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৪৯.৬২ শতাংশ। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইনটেক অনলাইনের ৩৪.২৫ শতাংশ, আফতাব অটোমোবাইলের ২৭.৩০ শতাংশ, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ২৩.৭০ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মার ২২.০৩ শতাংশ, কর্ণফুলী ইন্সু্যরেন্সের ২১.৩০ শতাংশ, খুলনা প্রিন্টিংয়ের ১৯.৫৪ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ১৬.৯১ শতাংশ, অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজের ১৩.৭৩ শতাংশ এবং সিমটেক্সের ১৩.৫৪ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে জিএসপি ফাইন্যান্সের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪০.৫৯ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিডি ফাইন্যান্সের ৪০.৫৯ শতাংশ, বে-লিজিংয়ের ৩৯.৩৩ শতাংশ, এমএল ডাইংয়ের ৩৮.৭১ শতাংশ, মতিন স্পিনিংয়ের ৩৮.৪০ শতাংশ, আইপিডিসির ৩৮.০২ শতাংশ, রিং শাইনের ৩৭.৭৬ শতাংশ, ম্যাকসন্সের ৩৫.৪৩ শতাংশ, বিডি ল্যাম্পের ৩৪.৩০ শতাংশ এবং শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ৩৪.১৭ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।