ফের ঊর্ধ্বমুখী এশিয়ার চালের বাজার

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
এশিয়ার চালের বাজার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয় ও থাই চালের দাম বেড়েছে। চাহিদা না বাড়ায় অপরিবর্তিত ছিল ভিয়েতনামিজ চালের বাজারদর। খবর বিজনেস রেকর্ডার। ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল বা আইজিসি সম্প্রতি চালের বৈশ্বিক উৎপাদন কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ফলে এ বছরের বড় একটি সময়জুড়ে চালের বৈশ্বিক দামও ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহে ভারতীয় চালের রপ্তানি মূল্য বেড়ে চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৫২৫-৫৩৫ ডলারে। এর আগের সপ্তাহে দেশটি এ চাল ৫১০-৫১৭ ডলারে রপ্তানি করেছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর এটিই সর্বোচ্চ দাম। ভারতের শীর্ষ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান সত্যম বালাজির নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগারওয়াল বলেন, '?শ্লথ চাহিদা সত্ত্বেও ভারতীয় চালের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ নিম্নমুখী সরবরাহ। সরকার কৃষকদের থেকে ধান কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। এ কারণে রপ্তানির জন্য সরবরাহ কমে গেছে।' নিম্নমুখী সরবরাহের বিপরীতে শক্তিশালী চাহিদার কারণে ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারও। চলতি সপ্তাহে দেশটি প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৬৬৫ ডলারে রপ্তানি করছে। আগের সপ্তাহে এটির রপ্তানি মূল্য ছিল ৬৪৮-৬৫০ ডলারে। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার কিছু বাজারে থাই চালের চাহিদা বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়, যা দাম বাড়ার পেছনে প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংককভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, ইন্দোনেশিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে দেশটি। এতে সেখানে ব্যাপক হারে থাই চালের নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে। যে কারণ বাড়ছে দাম। এছাড়া সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণেও থাই চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী মাসে বাজারে নতুন সরবরাহ ঢুকতে পারে। জানা গেছে, ভিয়েতনাম প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৬৫৩ ডলারে রপ্তানি করছে। গত সপ্তাহেও একই দামে রপ্তানি করা হয়েছিল। তিন সপ্তাহ ধরেই দেশটির চালের রপ্তানি মূল্য অপরিবর্তিত। \হমেকং ডেল্টাভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ক্রেতারা শীত-বসন্তকালীন চালের নতুন সরবরাহের জন্য অপেক্ষায় আছেন। এ কারণে এখন ভিয়েতনামিজ চালের চাহিদা খুব বেশি নেই। চলতি বছর দেশটির চাল রপ্তানি ২০২৩ সালের মতো ৮০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। কারণ বছরজুড়ে ভিয়েতনামিজ চালের বৈশ্বিক চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ভালো উৎপাদন ও মজুত সত্ত্বেও চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে চালের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিতে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম মজুত করছেন। \হফলে দাম বাড়ছে। যারা কৃত্রিমভাবে করছেন এবং দাম বাড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সর্বশেষ প্রতিবেদনে আইজিসি জানায়, চলতি মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৫১ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে, যা আগের পূর্বাভাস এবং গত মৌসুমের তুলনায় কম। এটির বৈশ্বিক বাণিজ্য কমে নামতে পারে পাঁচ কোটি টনে। এছাড়া ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫১ কোটি ৬০ লাখ টনে। তথ্য বলছে, চলতি বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছে। শস্যটির দামে এমন উলস্নম্ফনের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে খাদ্যমূল্যস্ফীতি। এশিয়া ও আফ্রিকায় অনেক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের অর্থনীতিতে বাড়ছে ঝুঁকি। বিশ্ববাজারে চাল সরবরাহ সংকটের পেছনে অনেক বিষয়কে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। এল নিনোর কারণে আবহাওয়ার অপ্রত্যাশিত আচরণ খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আবার কোথাও খরা ব্যাহত করছে শস্যটির আবাদ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হালনাগাদ মূল্যসূচক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ডিসেম্বরে চালের বৈশ্বিক দাম নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালে দাম বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ। বিশ্বের কয়েকশ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। শস্যটির এমন মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। গৃহস্থালির নিত্যদিনের ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অনেক পরিবার।