তৈরি পোশাকের বড় দুই বাজারে রপ্তানি কমছেই

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪০৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
দেশের তৈরি পোশাকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরই রপ্তানি গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। শীর্ষ এই দুটি বাজারে আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছিল। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরেনি। এর ফলে সার্বিকভাবে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমেছে। যদিও শীর্ষ পাঁচ গন্তব্যের মধ্যে বাকি তিনটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। দেশ তিনটি হলো- যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্স। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এমন তথ্য জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে ২ হাজার ৩৩৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। লোহিত সাগর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল না করায় খরচ ও সময় দুই-ই বেশি লাগছে। যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল হবে না। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। সে জন্য নিত্যপণ্য ও জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দেন ভোক্তারা। এর ফলে পোশাক রপ্তানির আদেশ কমতে থাকে। তবে নীতি সুদহার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছে পোশাক আমদানিকারক দেশগুলো। তাই সামনের মাসগুলোয় রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংকট ছড়িয়ে পড়ায় এখন নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩০৭ কোটি ডলার বেড়েছিল, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে ওই অর্থবছরে দেশটিতে মোট রপ্তানি দাঁড়িয়েছিল ৯০১ ডলারে। বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪০৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের এই সময় রপ্তানি হয়েছিল ৪২৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। একাধিক রপ্তানিকারক জানান, ডিসেম্বরে বড়দিনের দীর্ঘ ছুটি শেষে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কর্মক্ষেত্রে ফিরেছেন। তারা এখন নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়া নিয়ে আলোচনা করছেন। বড়দিন উপলক্ষে বিক্রি ভালো হয়েছে। ফলে জানুয়ারির শেষ দিকে ক্রয়াদেশ আসার হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মাসের শেষ দিকে অবশ্য তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। জার্মানির বাজারে ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল ১৫৬ কোটি ডলার। তবে পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি ৪৯ কোটি ডলার কমে ৬৬৮ কোটি ডলারে নামে। অথচ চলতি অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসেই দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ৫৯ কোটি ডলার। এ সময় জার্মানিতে মোট ২৮৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। মূলত এ কারণেই দেশটিতে পোশাকের খুচরা বিক্রি কমে গেছে। গত বছরের মার্চে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। ওই মাসে দেশটির খুচরা বিক্রি ২ দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছিল। বিদায়ী ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশে নামে। ফলে সামনের মাসগুলোয় দেশটি থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে পারে- এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন রপ্তানিকারকরা। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রপ্তানি কমলেও যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৩, সাড়ে ৬ ও ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাজ্যে ২৭১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১৮২ ও ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক। জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদউলস্নাহ আজিম বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস উপলক্ষে বিক্রি ভালো হয়েছে। দেশটি থেকে ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান বাড়ছিল। অন্যদিকে জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। ফলে আমরা কিছুটা আশাবাদী হচ্ছিলাম। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। লোহিত সাগর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল না করায় খরচ ও সময় দুই-ই বেশি লাগছে। যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল হবে না।'