ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দাম) বেধে দেওয়ায় গত দেড় বছরে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপকহারে কমে গেছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারে উভয় সংগঠনের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ডিবিএ'র পক্ষে প্রেসিডেন্ট ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম, সিনিয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইমিন্টে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমর হায়দার খানসহ সংগঠনের অন্য নেতারা ছিলেন।
এদিকে সভায় সিএমজেএফ'র পক্ষে প্রেসিডেন্ট এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া, জেনারেল সেক্রেটারি আবু আলী, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট বাবুল বর্মণ, জয়েন্ট সেক্রেটারি ইব্রাহিম হোসেন রেজওয়ান, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মাহফুজুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্য নেতারা ও সদস্যরা ছিলেন।
সভায় ডিবিএ'র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) বেঁধে দেওয়ায় গত দেড় বছরে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপকহারে কমে গেছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। বিগত দেড় বছরে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না, প্রায় ২০ মাস হতে চলল। ব্রোকারেজ হাউস ২৫০ এবং আরও ৭০টির মতো ট্রেকহোল্ডার আছে। সব মিলিয়ে ৩২০টির মতো কোম্পানি এখানে রান করছে। ৮০ শতাংশের মতো কোম্পানি তার অপারেটিং কস্ট (পরিচালন ব্যয়) তুলতে পারেছে না, আজকে প্রায় দেড় বছর। মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে। আমাদের ডিমিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জ মালিকা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ) হয়েছে ২০১৩ সালে। ডিমিউচু্যয়ালাইজেশনের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়েছে, তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে ১০ বছর হয়ে গেছে। এই ১০ বছর পর আমরা যেটা বিশ্বাস করি, এটা (ডিমিউচু্যয়ালাইজেশন) এখন রিভিউ করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে যদি তুলনা করি পুরো ইকোনমি এগিয়ে যাচ্ছে একভাবে, আর আমরা অন্যভাবে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে যে আইপিও এসেছে আমি মনে করি তা রিভিউ করার সময় এসেছে।
ডিবিএ'র সাবেক সভাপতি ও গেস্নাবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ফ্লোর প্রাইসের মতো জঘন্য ঘটনা আবার বিপদে ফেলেছে। স্বল্প সময়ের জন্য এটা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু এতো দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজারের আইন-কানুনগুলো মার্কেট ফ্রেন্ডলি হতে হবে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও মহাব্যবস্থাপক মাজেদা খাতুন বলেন, আমি বিএমবিএ'র নতুন সভাপতি হয়েছি। আশা করি নতুন বছরে আর্থিক খাতে ভালো হবে।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমরা চাচ্ছি একটা ভালো শেয়ার মার্কেট। শেয়ার মার্কেট ভালো হলে পুঁজিবাজারে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ কর্মী চলে গেছে। বড় হাউসগুলো কোনো রকমে টিকে আছে। ছোট হাউসগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বাজারের উন্নতি সম্ভব নয়। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ এটা খুবই কম। কর হার বাড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সব সময় এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সুতরাং ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সভায় সিএমজেএফ'র সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভুঁইয়া বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। সঠিক সময় শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারায় অনেকের পুঁজি আটকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বিনিয়োগকারীরা পরিত্রাণ চায়।
সিএমজেএফ'র সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা যদি পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে দেখতে চাই। বাজারে সব স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে যদি একটি ইকো সিস্টেম তৈরি করা যায় তবে বাজারে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবে। ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে আপনাদের যে উদ্বেগ তা আমরা লেখালিখির মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। সরাসরিও আমারা তাদের কাছে তুলে ধরেছি। এর ফলে যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে তা যদি মানুষের মধ্যে থেকে যায় তাহলে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা আর বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।
সিএমজেএফ'র সেক্রেটারি আবু আলী বলেন, সিএমজিএফ পুঁজিবাজারের উন্নতি করতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।