দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকার পরও মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস সূচক বাড়ল। আর ভোটের পর লেনদেন হওয়া সাত কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবস সূচক বাড়ল।
ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক বাড়লেও তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। দিনের পর দিন এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট খুব একটা লেনদেন হচ্ছে না। ফলে দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে। আবার ফ্লোরপ্রাইসে আটকে থাক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থও দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় আটকে রয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু এরপরেই হঠাৎ করে একের পর এক বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমতে থাকে। বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামে ঢালাও পতন হওয়ায় সার্বিক বাজারেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নেয় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এরপরও সবক'টি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির। আর ১৮৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিমা কোম্পানি রয়েছে ৪৫টি। বিপরীতে দাম বাড়ার তালিকায় বিমা কোম্পানি আছে মাত্র একটি।
প্রায় সবক'টি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমার পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবক'টি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮০০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বিকন ফার্মার শেয়ার। দিনভর কোম্পানিটির ৪৬ কোটি ৪১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশের ২৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সন্ধানী লাইফ ইন্সু্যরেন্স, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং মেঘনা লাইফ ইন্সু্যরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬০টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।