অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে আগামীকাল বুধবার। এবারের মুদ্রানীতি একটু ভিন্ন। এই প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে থেকে তিনজন অর্থনীতিবিদকে নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে এবারের মুদ্রানীতির দিকে সবার নজর থাকবে। ধাপে ধাপে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে হচ্ছে নতুন মুদ্রানীতি।
জানা গেছে, মুদ্রানীতি বেশ কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এ মুদ্রানীতিতে সরকারের অগ্রাধিকারগুলো আমলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি আগের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের বিষয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছে।
এছাড়া এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি ডলারের বাজার স্থিতিশীল করা ও রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় মুদ্রানীতির খসড়া অনুমোদন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বোর্ড সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, এবার ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারভিত্তিক হচ্ছে না ডলারের দর। ডলার সংকট সহনীয় পর্যায়ে না আসায় এ মুদ্রার দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না আসন্ন মুদ্রানীতিতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মুদ্রানীতির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে নতুন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন বছরের প্রথম ৬ মাসের মুদ্রানীতিতেও নীতি সুদের হার আরও বাড়িয়ে টাকার অবমূল্যায়ন কমানো হবে। এতে সুদহার বেড়ে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। মূলত নীতি সুদহারসহ ব্যাংক ঋণের সব রকম সুদ আরও বাড়িয়ে সংকোচনমুখী ধারা অব্যাহত রাখা হবে। বাকি নিয়ম থাকবে আগের মতোই।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য চলমান সব ধরনের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো চলমান থাকবে।
গত ছয় মাসে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। ৯ থেকে বেড়ে চলতি জানুয়ারিতে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যায়নি।
মুদ্রানীতির কমিটিতে গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রয়েছেন অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন।
এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় ৭ সদস্যবিশিষ্ট মুদ্রানীতি কমিটি পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গভর্নরসহ চারজন ও বাইরের তিনজন মোট সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে বেসরকারি খাতের কোনো ব্যক্তি মুদ্রানীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। ফলে অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান না থাকায় মুদ্রানীতি অনেকটা কাগজেই থেকে যায়।
তাই এবারের মুদ্রানীতিতে কী থাকছে সেটি নিয়ে সবার মধ্যেই আগ্রহ রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যদি মুদ্রানীতি হয় আশা করা যায় এটি আগের চেয়ে ভালো হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সাধুবাদ। তবে মুদ্রানীতি না দেখে এখনই বলা যাবে না কেমন হবে।