চালের বৈশ্বিক দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা

ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির সরকার পণ্যটির রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করে

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
সমাপ্ত ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের তীব্র সরবরাহ সংকট ছিল। নতুন বছরের প্রথম দিকেও এ সংকট অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে এশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যটির দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। খবর ইয়াহু ফাইন্যান্স। তথ্য বলছে, গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। শস্যটির দামে এমন উলস্নম্ফনের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এশিয়া ও আফ্রিকায় অনেক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের অর্থনীতিতে বাড়ছে ঝুঁকি। বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ সংকটের পেছনে অনেকগুলো বিষয়কে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। এল নিনোর কারণে আবহাওয়ার অপ্রত্যাশিত আচরণ খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, আবার কোথাও খরা ব্যাহত করছে শস্যটির আবাদ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া। ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির সরকার পণ্যটির রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করে। ওই সময় বাসমতী ছাড়া সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানিতে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয় সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতেই এ রপ্তানি নীতি গ্রহণ করে নয়াদিলিস্ন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে শস্যটির সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। এদিকে সরবরাহ ব্যাহত হলেও গত বছর শস্যটির চাহিদা বেড়েছে উলেস্নখযোগ্য হারে। ভারতসহ সব রপ্তানিকারক দেশেই আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে দাম। চলতি বছরও চাহিদায় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্ট্যাটিস্টার দেওয়া তথ্যমতে, থাইল্যান্ড বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক। গতকাল ৫ শতাংশ ভাঙা থাই চালের (সাদা চাল) দাম কিছুটা কমে টনপ্রতি ৬৪৬ ডলারে নামে। কিন্তু এখনো এটি ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম। বিশ্বের কয়েকশ' কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। শস্যটির এমন মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। গৃহস্থালির নিত্যদিনের ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অনেক পরিবার। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিলের বিশ্লেষক পিটার ক্লাব বলেন, নিকট ভবিষ্যতে বাজারে চালের সরবরাহ সংকট অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা। তিনি আরও বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে আগামী এপ্রিলে। ঈদের আগে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মুসলমানদের মাঝে শস্যটির চাহিদা বাড়বে। ভারত আগামী এপ্রিল থেকে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখবে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। কারণ ভোটার সমর্থন আদায় করে নিতে এ সময়ের মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের পরই চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। ফিলিপাইনে চালের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ফিলিপাইনের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়াও শীর্ষস্থানীয় চাল আমদানিকারক। দেশটির সরকার চালের উৎপাদন বাড়াতে সেনাবাহিনীকে কৃষকদের সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হালনাগাদ মূল্যসূচক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ডিসেম্বরে চালের বৈশ্বিক দাম নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালে দাম বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ।