শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া আমানতের ৬৬ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশই বড় দুই বিভাগ ঢাকা ও চট্টগ্রামের। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মোট ব্যাংক হিসাবের ৪৫ শতাংশও খোলা হয়েছে এ দুই বিভাগে। দুই বিভাগের মধ্যে আমানত ও হিসাব সংখ্যার দিক থেকে আবার এগিয়ে আছে ঢাকা। মোট আমানতের ৪২ শতাংশ আর হিসাবের ২৩ শতাংশ ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের শেষে শিক্ষার্থীদের ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ব্যাংক হিসাবে মোট জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশেষ সুবিধাযুক্ত এই ব্যাংক হিসাবে ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমানত রয়েছে ৯৭৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমানত ৫২৮ কোটি টাকা। এই দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ ৬৬ শতাংশ।
আমানতের দিক থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পেছনে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ ১৯৭ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানগুলোতে আছে যথাক্রমে খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ। তালিকার তলানিতে থাকা ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ মাত্র ৭৭ কোটি টাকা। আমানত ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম হলেও হিসাব সংখ্যার দিক থেকে সবার পেছনে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই বিভাগে ২ লাখ ৩৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
এ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, সব ধরনের সেবা শহরভিত্তিক কেন্দ্রীভূত হওয়ার এই সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগের বেশ কিছু সফলতা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পুরো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে লেনদেনের মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকছে।
স্কুল শিক্ষার্থীদের মোট আমানতের ৭০ শতাংশ শহরের শিক্ষার্থীদের। মাত্র ৩০ শতাংশ গ্রামের শিক্ষার্থীদের। শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। আর গ্রামের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ ৬৬৫ কোটি টাকা। অথচ মোট হিসাব সংখ্যার ৫৫ শতাংশ গ্রামের শিক্ষার্থীদের নামে খোলা হয়েছে। শহরের শিক্ষার্থীদের হিসাব সংখ্যা ৪৫ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, শহরের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাদের হিসাবে টাকা জমা থেকে যায়। আর গ্রামের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকাসহ জমানো টাকার অধিকাংশ নানা প্রয়োজনে খরচ করে ফেলে।