ইইউর পোশাক আমদানি কমেছে ১৯.৫৩%
প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। দেশ থেকে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়, এর ৫০ শতাংশই যায় ইইউ অঞ্চলে। সম্প্রতি বিশ্ববাজার থেকে পোশাক রপ্তানি কমিয়েছে ইইউ। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের ওপরও। সদ্যসমাপ্ত ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে ইইউর দেশগুলোয় বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমেছে। ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইইউর দেশগুলো ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানি কমিয়েছে চীন থেকে। এর পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইইউর দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে এক হাজার ৮৫৭ কোটি ইউরোর। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তা কমে এক হাজার ৪৯৪ কোটি ইউরোয় নেমেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৬৩ কোটি ইউরোর পোশাক আমদানি কমিয়েছে ইইউ।
২০২২ সালে চীন থেকে দুই হাজার ৪৪১ কোটি ইউরোর পোশাক আমদানি করে ইইউ, যা ২০২৩ সালের একই সময় এসে দাঁড়ায় এক হাজার ৯২৪ কোটি ইউরোয়। অর্থাৎ চীন থেকে ৫১৬ কোটি ৮৯ লাখ ইউরো বা ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ পণ্য আমদানি কমিয়েছে ইইউ।
সমাপ্ত বছরের ১০ মাসে বিশ্ববাজার থেকে ইইউর মোট পোশাক আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আট হাজার ৩৩৭ কোটি ইউরোর পোশাক আমদানি করলেও ২০২৩ সালের একই সময়ে তা দাঁড়ায় সাত হাজার ৩৫ কোটি ইউরোয়। অর্থাৎ এক হাজার ৩০১ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইইউর পোশাকের চাহিদা কমেছে। যার কারণে গত এক বছরে আমদানি কমিয়েছে ইউরোপ। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর। তবে সামনে পোশাক খাতে আবারও সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ফের ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ও পরিবহণ খরচও কমছে। এগুলো প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ধারার ভিত্তি তৈরি করবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, 'যেখানে যত বেশি মার্কেট শেয়ার থাকবে, সেখানকার মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে সে প্রভাব বড় শেয়ারধারীর ওপর বেশি পড়বে। ইইউর পোশাক আমদানির বড় দুই অংশীদার বাংলাদেশ ও চীন। সে জন্যই মূলত বাংলাদেশ ও চীন থেকে আমদানির হার এবং পরিমাণও কমেছে। এ কারণেই এই খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।'
বিজিএমইএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে ২০২৩ সালের শেষ দুই মাসেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৪ সালটি কেমন যাবে, এটা বলা কঠিন। কারণ, একদিকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যায়, সেটি আমাদের দেখতে হবে। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাপস্নাই চেইন ও মূল্যস্ফীতিসহ আরও অনেক বিষয়। সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থিনীতিতেও কিছু চাপ তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিম্নমুখী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ সালে অর্থনীতি সার্বিকভাবে চাপের মধ্যে থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের চাহিদা বাড়বে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।