শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের স্বার্থে আমদানিনীতি পরিবর্তনের দাবি

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন
যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় আমদানি নীতি পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএমইএ)। পাশাপাশি দেশীয় শিল্পের বিকাশে বিদ্যমান নানান বাধা দূরীকরণে এএসআরও জারীর আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে সরকারি কেনাকাটায় দেশীয় উৎপাদনকারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিআরএমইএ। যৌক্তিক এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা। শিল্প সচিব জানিয়েছেন ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে বিআরএমইএ। অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, মন্ত্রীপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব, ইআরডি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব ও মহাপরিচালকদের।

বিআরএমইএ সভাপতি স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও দেশীয় উদ্যেক্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ এখন এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, কম্প্রেসর, টেলিভিশন, এলিভেটর বা লিফট, সুইচ-সকেট, ফ্যান, এলইডি লাইট বাল্ব, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার, হোম অ্যান্ড কিচেন অ্যাপস্নায়েন্সসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও দামে সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। এমন অবস্থায় কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে উচ্চমূল্যে এসব পণ্য আমদানি নিরর্থক ও অপচয় মাত্র। সেই সঙ্গে ওইমতো আমদানি দেশীয় শিল্প বিকাশ ও স্বার্থের পরিপন্থি। তাই দেশীয় শিল্প বিকাশ ও কর্মসংস্থানে আমদানি নীতি পরিবর্তন সময়ের দাবি।

বিআরএমইএ'র চিঠিতে উলেস্নখ করা হয়, দেশীয় উৎপাদনকারীদের ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ বাধ্যতামূলক। বিদেশে কোনো পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ নেয়াও বাধ্যতামূলক। রয়েছে বিপুল শুল্ক বাধা। অথচ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে বিএসটিআইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ সনদের বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে আমদানি করছে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই আমদানিতে নামমাত্র শুল্ক থাকায় নিম্নমানের পণ্যে দেশ সয়লাব হচ্ছে। এতে বিপুল অর্থের অপচয় ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমদানি পর্যায়ে বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে বিআরএমইএ।

এদিকে, সরকারি সংস্থার অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় উপেক্ষিত হচ্ছে দেশীয় উৎপাদকদের তৈরি পণ্য। প্রায় সব সরকারি দরপত্রে বেশি দামের আমদানিকৃত পণ্যের ব্যান্ড বা দেশের নাম সরাসরি উলেস্নখ থাকে। ফলে দেশীয় ব্র্যান্ড বা উৎপাদনকারীরা কম মূল্য প্রস্তাব করেও কৌশলে বাদ পড়ে যায়। ফলে সুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে দেশীয় উৎপাদনকারীরা বঞ্চিত হচ্ছে। আবার দরপত্রে আমদানিকৃত পণ্যের ব্র্যান্ড বা দেশের নাম সরাসরি উলেস্নখ পিপিআর-২০০৮ বিধি ২৯(৩) এর সরাসরি পরিপন্থি।

বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এঙ্পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন-এর মহাসচিব জাহিদুল আলম বলেন, পৃথিবীর সচেতন দেশগুলো নিজস্ব শিল্প রক্ষায় আমদানি নিষিদ্ধ করছে। বাংলাদেশেরও এখন সে পথে হাঁটা উচিত। বাংলাদেশে তৈরি আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বহু উন্নত দেশে রপ্তানি হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে তৈরি বলে এসব সমমানের পণ্য বি গ্রেড বা সেকেন্ড/থার্ড গ্রেড বিবেচনা করে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি সংস্থার কেনাকাটায় অনীহা প্রকাশ বা কৌশলে বাধা সৃষ্টি করা হয়। যার ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হয়। উদ্যেক্তারাও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হন। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে আমাদের আবেদন, যেন স্থানীয় কেনাকাটায় দেশীয় উৎপাদকের প্রাধান্য দেয়া হয়। এতে সবদিক দিয়ে দেশ লাভবান হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে