বলিউডের ভাইজানখ্যাত সালমান খান। চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক সেলিম খানের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি। বলিউডের ব্যবসায়িক সফল থেকে জনপ্রিয় সিনেমার তালিকায় সালমান খান ছাড়া তা অসম্পূর্ণ। তার হাত ধরেই বলিউডে জায়গা পেয়েছে অনেক তারকা থেকে নির্মাতা, প্রযোজকরা। সালমান খান মানেই সুপারহিট ছবি এমনটাই মনে করেন দর্শক ভক্তরা। তিনি প্রমাণও দিয়েছেন অসংখ্যবার। বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে তার ভক্তরা নানা উপাধি দিয়েছেন। কাছের বন্ধুরা তাকে ডাকেন সালস্নু বলে। আর পরিবার ডাকে সলিম। তার আসল নাম আব্দুর রশিদ সেলিম। তবে ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী তিনি সালমান খান নামেই পরিচিত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সালমান খান বলিউডে এতটা আধিপত্য বিস্তার করবেন সেটা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। মুম্বাই সিনে ইন্ডাস্ট্রি তার নামে কাঁপে, তার সিনেমা মুক্তি পেলে বক্স অফিসে ওঠে ঘূর্ণিঝড়। গত তিন দশকে বলিউডের সবচেয়ে সফল তারকাদের একজন তিনি।
সালমানের বলিউডে অভিষেক হয় ১৯৮৮ সালে 'বিবি হো তো অ্যায়সি' সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এখানে অবশ্য ছোট একটি চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। নায়ক হিসেবে সালস্নুকে প্রথম পাওয়া যায় ১৯৮৯ সালে সুরাজ বার্জাতিয়া পরিচালিত 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া' সিনেমায়। প্রথম সিনেমা দিয়েই বাজিমাত করেন তিনি। এটি সেই সময়কার সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা হিসেবে রেকর্ড করে। সে সঙ্গে সালমানের হাতে চলে আসে শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সালমানকে। 'সাজান', 'হাম আপকে হ্যায় কৌন' থেকে শুরু করে 'করণ অর্জুন', 'জড়ুয়া', 'হাম দিল দে চুকে সানাম', 'হাম সাথ সাথ হ্যায়', 'তেরে নাম', 'জান-এ-মান', 'পার্টনার', 'দাবাং', 'এক থা টাইগার', 'ওয়ান্টেড', 'রেডি', 'বডিগার্ড', 'কিক', 'বজরঙ্গি ভাইজান', 'প্রেম রতন ধন পায়ো' ও 'সুলতান', 'টাইগার জিন্দা হ্যায়', 'রেস থ্রি', 'ভারত'সহ বহু সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
বলিউডের হিট মেশিন বলা হয় সালমান খানকে। বক্স অফিসে তিনি এমন সব রেকর্ড গড়েছেন- যা আর কেউ ছুঁতেও পারেনি। একটানা ১৫টি ১০০ কোটির বেশি আয় করা সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি- যা বলিউডের ইতিহাসে বিরল। এ ছাড়া ৩০০ কোটির ক্লাবেও রয়েছে তার ৩টি সিনেমা। এটিও অনন্য অর্জন। শুধু সিনেমা জগৎ নয়, টিভি পর্দায়ও সালমানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। 'দশ কা দম', 'বিগ বস'-এর মতো তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো তারই সঞ্চালিত। বছরের পর বছর ধরে এগুলো তিনি জনপ্রিয়তার সঙ্গে উপস্থাপনা করে আসছেন।
অবাক করার কথা হলো এই সালমান খান নাকি অভিনেতা হতে চাননি। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ভাতিজা আরহান খানের পডকাস্টে এমন তথ্য দিলেন সালমান। তিনি জানান, চেয়েছিলেন সিনেমার পরিচালক হতে, কিন্তু পরিচালক হিসেবে কেউ তাকে কাজ দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই অভিনেতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন।
'ডাম্ব বিরিয়ানি' নামের এই পডকাস্টে সালমান জানান, কিশোর বয়সে মডেলিং করার সময়ই তার ইচ্ছা জাগে পরিচালনার। কিন্তু পরিচালক হিসেবে কাজ চাইতে যেখানেই গেছেন, সেখানেই তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অভিনয় করার। সালমান বলেন, 'আমি পরিচালক হতে চেয়েছি। মডেলিং শুরু করার পর থেকেই নির্দেশক হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। সে সময় টুকটাক লিখতাম, এখনো লিখি। কিন্তু পরিচালক হিসেবে আমাকে কেউ কাজে নেয়নি। আমার তখন ১৭ বছর বয়স। তারা বলত, এই বাচ্চা কী পরিচালনা করবে!'
পরিচালক হিসেবে কাজ না দেওয়া সেই প্রযোজকরাই উৎসাহিত করেছেন অভিনয় করতে। সালমান বলেন, 'যখনই আমি পরিচালনার বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতাম, তারা বলতেন অভিনয় শুরু করতে। এরপর হঠাৎ করেই চাচাতো ভাইদের সঙ্গে ভিডিও তৈরি শুরু করি, সেখানে নায়ক হিসেবে অভিনয় করতাম আমি। ধীরে ধীরে কাজটাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিই।'
এদিকে এ নায়ক জীবনের বহু বসন্ত কাটিয়ে ফেলেছেন। এই দীর্ঘপথে এসেছে বহু নারী, তবে আজও তিনি অবিবাহিত। যাকে বলা হয় বলিউডের মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর। হয়ত আর বিয়েও করবেন না তিনি। তবে ভাইজানের বিয়েটা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আরও ২৪ বছর আগে। দাওয়াতের কার্ডও ছাপা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সেই বিয়ে ভেঙে দেন বলিউড টাইগার। একটি সাক্ষাৎকারে সালমান খানের সেই ভাঙা বিয়ের রহস্য উন্মোচন করেছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। সাজিদ জানিয়েছিলেন, ঠিকঠাক হয়েও ভেঙে যায় সেই বিয়ে। ১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর বাবা সেলিম খানের জন্মদিনের দিনই বিয়ে ঠিক হয়েছিল সালমান ও সঙ্গীতার। বাড়িতেও প্রস্তুতি শেষ তবে আচমকাই ঠিক পাঁচ দিনে আগে সালমানই ঘটিয়ে ফেলেন চরম অঘটন। জানিয়ে দেন, তিনি বিয়ে করছেন না। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, তার নাকি মুড নেই, অর্থাৎ ইচ্ছে নেই। সেই কারণে তিনি বিয়ে করতে পারবেন না। সবাই ভীষণ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে সালমান খানের মুখের ওপর কথা বলার সাহস আর কয়জনেরই বা আছে। এরপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। সঙ্গীতা বিজলানির সঙ্গে ১৯৮৬ সাল থেকে সালমান খানের প্রেম ছিল। নিজের থেকে ৬ বছরের বড় সঙ্গীতাকে সে সময় বিয়ে না করলেও পরবর্তী সময়ে এই নায়িকা বিয়ে করেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনকে। যদিও টেকেনি সেই সংসার। ২০১০ সালে ডিভোর্স হয় সঙ্গীতা ও আজহার উদ্দিনের।