আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলা চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৯তম জন্মদিন ছিলো ৪ নভেম্বর। তৎকালীন ভারতবর্ষের পাবনার ভারেঙ্গায় ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর তার জন্ম। বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পাশাপাশি কবি ও নাট্যকার। মা ইন্দু বালা দেবী। ১১ ভাইবোনের মধ্যে ঋত্বিক কুমার ঘটক ছিলেন সবার ছোট এবং আদরের। বড়ভাই মনিশ কুমার ঘটক ছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, থিয়েটার ব্যক্তিত্ব। তার মেয়ে, নাম করা লেখক মহাস্বেতা দেবী। পুরো পরিবারটি সাংস্কৃতিক অনুরাগী ছিলেন তাই এ ক্ষেত্রে ভূমিকাও রাখেন।
ঋত্বিক কুমার ঘটকের মায়ের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর মিঞাপাড়া পাবলিক লাইব্রেরির পাশে (বর্তমান হোমিওপ্যাথি কলেজ)। এখানে ঋত্বিক কুমার ঘটক বেড়ে উঠেন। শুনা যায়, তিনি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেন। এখানে অধ্যায়নকালে লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান। রাজশাহী কলেজ এবং পদ্মা নদী ছিল তার প্রিয় স্থান। অবসরে পদ্মা নদীর ধারে গিয়ে লেখালেখির বিষয় নিয়ে ভাবতেন। পদ্মা নদীর চরে বেড়াতেন। বন্ধু সহপাঠীদের সঙ্গে ছিল মধুর সম্পর্ক। ছোটদের নিয়ে বেড়াতে তিনি ভালোবাসতেন। তবে তার মনোযোগ থাকতো পড়াশোনা, লেখালেখির দিকে। ভারতবর্ষ ভেঙে গেলে পরিবারের সঙ্গে ভারতের ওপার বাংলায় চলে গেলেও কখনো ভুলে যাননি জন্মভূমি এপার বাংলাকে। তার একটি চলচ্চিত্রে তিনি এপার বাংলাকে দেখিয়ে বলেন, 'ওই আমার দেশ'। তার প্রথম লেখা নাটক 'কালো সায়োর', যুক্ত হন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটারে। চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের সহযোগী হিসেবে তার চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ। চলচ্চিত্রকার নিমাই ঘোষের 'ছিন্নমূল' চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পী ও সহকারী পরিচালক ছিলেন। তৈরি করেন নিজের চলচ্চিত্র 'নাগরিক'। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে- যদিও এটি মুক্তি পায় অনেক পরে ১৯৭৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর।
'অযান্তিক' চলচ্চিত্র তৈরির পর তার খ্যাতি আরো ছড়িয়ে পড়ে। তৈরি করেন 'বাড়ি থেকে পালিয়ে'। শরণার্থী কাহিনী নিয়ে তৈরি করেন 'ট্রিলজী'। তার 'মেঘে ঢাকা তারা' চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মন জয় করে নেয়। 'কোমল গাদ্দার' ও 'সুবর্ণা রেখা' তৈরির পর দেখা দেয় তার আর্থিক সংকট। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি চেষ্টা করতে থাকেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার। বেশ কিছু প্রামান্য চলচ্চিত্র, তথ্য চলচ্চিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও তৈরি করেন তিনি। এগুলি হলো, 'জীবন স্রোত', 'বিহারকা দর্শনীয় স্থান', 'ইয়ে কৌন', 'সায়ান্টিফিক অব টুমরো', 'আমার লেলিন' 'পুরুলিয়া ছাউ', 'ফেয়ার', 'সিভিল ডিফেন্স', 'বেন্ডিজভোয়াস', 'দুর্বার গতি পদ্মা'। যে চলচ্চিত্রগুলোর কাজ শেষ করতে পারেনি, সেগুলো হলো, 'কত অজানা রে', 'বাংলার দর্শন', 'রঙের গোলাপ', 'বেদেনী', 'ইন্দিরা গান্ধী', 'ওস্তাদ' আলাউদ্দিন খান', 'পারসোনালিটি স্টাডি'। তিনি ভারতের পুনা ফ্লিম ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
একজন খাটি বাঙালি হয়েও দক্ষতার সঙ্গে মুম্বাইয়ের হিন্দি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখে শুনাম অর্জন করেন। বাংলাদেশ ভারত যৌথভাবে তৈরি মলস্নব বর্মণের কাহিনী নিয়ে তার 'তিতাস একটি নদীর নাম' দর্শকদের হৃদয়ে বেশ নারা দেয়। তার লেখা শেষ নাটক 'জ্বালা'। স্বরচিত কাহিনী নিয়ে তার শেষ চলচ্চিত্র 'যুক্তি তর্ক গল্প'। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রম্নয়ারি তিনি মৃতু্যবরণ করেন। সুষ্ঠু চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে তিনি অমর। তিনি বেঁচে আছেন তার তৈরি করা চলচ্চিত্রগুলোতে। ভারত সরকার তাকে 'পদ্মশ্রী' উপাধি প্রদান করেন।