নব্বইয়ের দশকের সাড়া জাগানো নায়িকা জুহি চাওলা। শাহরুখ খান ও আমির খান থেকে সেই সময়ের কমবেশি সব লিডিং হিরো (সালমান খান ব্যতীত)'র সঙ্গে পর্দায় রোম্যান্স করেছেন জুহি। তবে নিজের লাভ স্টোরি সবার আড়ালে রেখেছিলেন 'হাম হ্যায় রাহি প্যায়ার কে' নায়িকা। শিল্পপতি জয় মেহতাকে ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন নায়িকা জুহি চাওলা। তখন তার ক্যারিয়ার মধ্যগগনে। বিয়ের ঠিক আগের রাতে অঝোরে কান্না জুড়ে দেন এই জনপ্রিয় লাস্যময়ী অভিনেত্রী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, বিয়েতে আমন্ত্রিত প্রায় দুই হাজার অতিথিদের অনুষ্ঠানে আসতে নিষেধ করে দেন জুহির হবু শাশুড়ি। গুজরাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নায়িকা জুহি চাওলা বলেছিলেন যে বিয়ের এক বছর আগে তার মা মারা গিয়েছিলেন এবং জীবনের সবচেয়ে বড় দিনের জন্যও সেই কারণে খুশি হতে পারেননি জুহি, মাকে বড্ড মিস করছিলেন। অভিনেত্রী শেয়ার করেছেন যে বিয়ের আমন্ত্রিতদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'বেশ কয়েকটি বড় ছবির শুটিং করছিলাম, এর মাঝেই আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। মা তখন সবেমাত্র মারা গেছেন। যখন বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে আসছিল, তখন আমি ভাবছিলাম আমার মা চলে গেছে, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম, এবং এখন আমার কেরিয়ারও চলে যাবে। আমি জানতাম না কীভাবে এতে খুশি হওয়া যায়। তো, আমি একদিন ভেঙে পড়লাম এবং আমি আমার শাশুড়িকে বললাম এবং তিনি বললেন, ঠিক আছে।
জুহি চাওলা বলেন, 'সম্ভবত ২০০০ লোকের কাছে আমন্ত্রণ পৌঁছেছিল। শেষে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ জন লোক নিয়ে বিয়েটা হয়ে গেল। তার শাশুড়িই সেই আমন্ত্রণগুলো বাতিল করেছেন বিয়ের ঠিক আগের মুহূর্তে।' জুহি ও জয় মেহতার বয়সের ফারাক মাত্র ৬ বছরের। দম্পতির দুই সন্তান- কন্যা জাহ্নবী মেহতা এবং পুত্র অর্জুন মেহতা। সালতানাত (১৯৮৬) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউড সফর শুরু জুহির। তার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় 'কেয়ামত সে কায়ামত তক' (১৯৮৮)। 'ডর', 'হাম হ্যায় রাহি পেয়ার কে', 'দিওয়ানা মাস্তানা', 'ইয়েস বস', 'ইশক', 'ঝঙ্কার বিটস', 'মাই ব্রাদার নিখিল'-এর মতো একাধিক জনপ্রিয় ও ভিন্ন স্বাদের ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এখন অবশ্য অভিনয় থেকে দূরেই থাকেন জুহি।
জুহি চাওলার জন্ম ১৩ নভেম্বর, ১৯৬৭। তিনি হরিয়ানার আম্বালায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভারতীয় রাজস্ব পরিষেবার একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে হিন্দি সিনেমার অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার কমিক টাইমিং এবং স্ক্রিনে প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের জন্য স্বীকৃত।
১৯৮৪ সালের মিস ইন্ডিয়া সুন্দরী প্রতিযোগিতা জেতার পর, জুহি চাওলা হিন্দি চলচ্চিত্র সুলতানাত (১৯৮৬) এ একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির মাধ্যমে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন এবং ট্র্যাজিক রোম্যান্স ফিল্ম কেয়ামত সে কেয়ামত তক (১৯৮৮)তে তার যুগান্তকারী ভূমিকা ছিল- যা তাকে ফিল্মফেয়ার অর্জন করতে সহযোগিতা করেছিল। শেক্সপিয়রের রোমিও এবং জুলিয়েটের আধুনিক যুগের অভিযোজন চলচ্চিত্রটি একটি বড় সমালোচনা এবং বাণিজ্যিক সাফল্য ছিল, যেখানে আমীর খান এবং জুহি চাওলা রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন। ১৯৯৩ সালটি তার কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরও সাফল্য আসে ১৯৯৭ সালে দিওয়ানা মাস্তানা, ইয়েস বস এবং ইশক দিয়ে।
পরবর্তী দশকে জুহি চাওলা আর্ট-হাউস প্রজেক্টে টাইপের বিরুদ্ধে খেলা শুরু করেন, ঝংকার বিটস (২০০৩), ৩ ডিওয়ারিন (২০০৩), মাই ব্রাদার নিখিল (২০০৫), আই অ্যাম (২০১১) এবং গুলাব গ্যাং-এ তার অভিনয়ের জন্য সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন। তিনি বেশ কয়েকটি পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বায়োপিক শহীদ উধম সিং (২০০০), দেস হোয়া পরদেস (২০০৪), ওয়ারিস শাহ: ইশক দা ওয়ারিস (২০০৬) এবং সুখমনি- হোপ ফর লাইফ (২০১০)। তার টেলিভিশন কাজের মধ্যে তিনি নৃত্য রিয়েলিটি শো ঝলক দিখলা জা (২০০৯)-এর তৃতীয় সিজনে একজন প্রতিভা বিচারক ছিলেন- স্ট্রিমিং সিরিজ হুশ হুশ (২০২২) এবং দ্য রেলওয়ে মেন (২০২৩)-এর সহায়ক ভূমিকায়।
১৯৯২ সালে তিনি ঋষি কাপুরের সঙ্গে বোল রাধা বোলে উপস্থিত হন- যার জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রীর জন্য তৃতীয় ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জুহি চাওলা পরবর্তী সময়ে সঞ্জয় দত্তের বিপরীতে অ্যাকশন কমেডি সন অব সরদার (২০১২)-এ অভিনয় করেন, যেটি সমালোচকদের দ্বারা খুব কমই গৃহীত হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি শাবানা আজমির সঙ্গে নারীকেন্দ্রিক নাটক চক এন ডাস্টারে অভিনয় করেছিলেন। ফিল্মটি সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন এবং জুহি চাওলার অভিনয় ভালভাবে গৃহীত হয়েছিল। সদা হাস্যোজ্জ্বল জুহি কোটি কোটি দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন- তার সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে। জয়তু জুহি।