বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাহীর অজানা গন্তব্য...

'আমাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।' হৃদয় খুুঁড়ে বেদনা জাগানো সর্বশেষ এই ঘোষণা দিয়েছিলেন দু'দিন আগে চিত্র নায়িকা শারমিন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া মাহী। তার এই ঘোষণায় ছিল না পিছুটানের কোনো লেশমাত্র বরং ছিল তার সামনেই এগিয়ে চলার প্রত্যয়। বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন আগেই আর কাগজে-কলমে সেটারই আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করলেন মাত্রই
মাতিয়ার রাফায়েল
  ২১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মাহিয়া মাহী

'আমাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।' এই ছিল দু'দিন আগে দেওয়া চিত্র নায়িকা শারমিন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া মাহীর সর্বশেষ ঘোষণা। তার এই ঘোষণায় ছিল না কোনো পিছুটানের লেশমাত্র বরং ছিল তার সামনেই এগিয়ে চলার প্রত্যয়। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে মাহী বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর কাগজে-কলমে সেটারই আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করলেন দু'দিন আগে।

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহী বললেন, 'আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। এর আগে আমরা দুজনেই চেষ্টা করেছি একসঙ্গে থাকার। যখন দেখেছি চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না, তখন আসলে চেষ্টাটা ছেড়ে দিয়েছি। একসঙ্গে থেকে তিক্ত হওয়ার চেয়ে বন্ধুত্বটা থাকা ভালো।'

আসলে কী চাইতে কী যেন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক মাহীর বিবাহিত জীবন। এ কি মাহী নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে তার কোনো সদুত্তর পান? স্বপ্ন দেখেন এক, ফসল ফলে আরেক। এই-ই যেন মাহীর বিধিলিপি। চলচ্চিত্রে ভালোমতোই থিতু হয়েছিলেন। কিন্তু তার ভেতরে-বাইরে কীসের চাপে যেন লন্ডভন্ড হয়ে যায় ক্যারিয়ারে অর্জিত সাফল্যগুলো। প্রথম (দ্বিতীয়?) স্বামীর সঙ্গে ভালোবাসার বিয়ে ভাঙা, ফের বিয়ে, 'মুরাদকান্ড', জাতীয় নির্বাচন- একের পর এক ঝুটঝামেলা ছাড়তেই চাইছিল না তাকে। আবার একের পর এক বিয়ে কেন ভেঙে যায় মাহীর তাও জানতে পারে না কেউ। অপুর সঙ্গে বিয়ে ভাঙতে না ভাঙতেই বা মাস তিনেক যেতে না যেতেই জোগাড়যন্ত করে ফেলেন কামরুজ্জামান সরকার রাকিব নামে আরেক পাত্র।

এতটাই দ্রম্নত ঘটে যে, তখন অনেকে মনে করেছেন তার আগের বিয়েটা ভাঙার পদধ্বনির সময় থেকেই মাহী হয়ত পরবর্তী বিয়ের পাত্রটি খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিলেন। পেয়েও যান যথারীতি দ্রম্নত। অনেকে যেমন চাকরি ছাড়ার আগে আরেক চাকরি ঠিক করেন কিংবা আরেকটি চাকরি নিশ্চিত না করার আগে আগের চাকরি ছাড়েন না- ব্যাপারটি যেন সেরকমই ঘটেছিল মাহীর দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে। তাই অনেকের প্রশ্ন, এবারও কি সেই তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। অর্থাৎ রাকিবের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আবার দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে পরবর্তী বিয়ে নিয়ে নতুন খবরের শিরোনাম হবেন মাহী? তখন সেটা কয় নম্বর বিয়ে হবে মাহীর? কেননা, এমন রটনাও আছে অপুর সঙ্গে বিয়ের আগে শাহরিয়ার ইসলাম শাওন নামের একজনের সঙ্গেও বিয়ে হয়েছিল মাহীর।

এমন তথ্য উঠে এসেছে পুলিশেরই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। যে মামলা থেকে শাওনকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতের সংশ্লিষ্ট জিআর শাখায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক সোহরাব মিয়া। প্রতিবেদনে তখন বলা হয়, চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপার (মাহিয়া মাহী) সঙ্গে শাহরিয়ার ইসলাম শাওনের বিয়ে হয়। তারা দুজন কিছুদিন সংসারও করেছিলেন। প্রতিবেদনে আরো উলেস্নখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ মে তারিখে মাহীর সঙ্গে শাওনের বিয়ে হয়। যা রয়েছে বাড্ডার কাজী সালাহউদ্দিনের ভলিউম নং ১৮৬/১৫ পৃষ্ঠা ৬৫। তদন্তে এই বিয়ের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহের এক মাস পর মাহির চলচ্চিত্রে কাজ করা নিয়ে শাওন বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে তারা আলাদা থাকা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পরিবারের মধ্যস্থতায় তাদের ডিভোর্স হয়। বিয়ের বিরুদ্ধে মামলায় মাহী কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই তথ্যগত ভুলের কারণে এ মামলার দায় থেকে শাওনকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেছে পুলিশ।

এমনই বিয়ে বিচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় স্বামী অপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে তৃতীয় বিয়ে করেন ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০১৬ সালের ২৫ মে। পাঁচ বছর কাটতে না কাটতেই পঞ্চম বিবাহবার্ষিকীর দু'দিন আগে সেই সম্পর্কের ইতি টানেন অভিনেত্রী। তখনও দ্বিতীয় স্বামী অপু বলেছিলেন, 'ছয় মাস ধরে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়ায় সমস্যা হচ্ছিল। তাই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।' নতুন বিয়ের পর মাহী তৃতীয় স্বামী রাকিবের উদ্দেশে লিখেন, 'আজকের তারিখটা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখব প্রিয় ডায়েরিতে। তোমার এই একটা লাইনের জন্য আমি যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। প্রিয়তম, তোমার এই একমাত্র বৌয়ের ব্যক্তিগত চিত্রধারক মৃতু্য পর্যন্ত তুমিই থাকবে ইনশাআলস্নাহ, ভালোবাসি তোমাকে।'

এ বিয়ের পর থেকেই মাহী আরও উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠলেন। বুঝলেন নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনীতিতে জড়াতে হবে। বিয়ের অল্প সময়েই সন্তানও নিলেন। নাম রাখলেন ফারিশ। মানে কী? ফারিশতা থেকে ফারিশ! সন্তানকে দেওয়া এমন একটি চমৎকার নাম থেকেও বোঝা যায় এ সংসার কখনো ভেঙে যাবে এমন মনোভাব কখনোই ছিলেন না মাহীর। এ সংসার আজীবন চলবে ভেবেই তো এই সন্তান নেওয়া!

অনেকে মনে করেন, 'মুরাদকান্ড'র দুঃসহ স্মৃতিই মাহীকে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি অতি উৎসাহী করে তোলে। যে রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে মুরাদ মাহীকে অপমান করেছে সেটারই শিক্ষা দিতে চাইলেন এমপি হয়ে তিনি। কিন্তু কোনোভাবেই পারলেন না।

\হসেক্ষেত্রে গন্তব্য কোথায় হবে মাহীর! রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের স্বপ্নের সবই ভেঙে চুরমার! হঠাৎই ফেসবুকে ফলোয়ারদের চোখে পড়ল মাহীর তৃতীয় সংসারও ভাঙছে! ১৬ ফেব্রম্নয়ারি ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় জানান মাহিয়া মাহী। নড়েচড়ে বসলো মিডিয়া। এরপর থেকে ফেসবুকে বিভিন্ন সময় করা পোস্টে নিজের একাকিত্বে ভোগা ও আস্থাহীনতার বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।

তবে কেন বিয়ে ভাঙছে কিছুই বলতে চাইলেন না মাহী। বলেনওনি। শুধু জানিয়েছেন, দুজনে মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয় বিয়েটির মতোই তৃতীয় বিয়ে ভাঙার কাহিনীটিও রহস্যই থেকে গেল কেন মাহীর বিয়ে বারবার ভাঙে! কেন তার সংসার এতটা ঠুনকো!

তবে মাহী একপর্যায়ে বললেন, তার পেটে বোমা মারলেও, মাথায় গুলি চালালেও তিনি কখনোই বলবেন না কেন তার এই বিয়েটি ভেঙে গেল! ২৭ ফেব্রম্নয়ারি ফেসবুকে তার এক ভিডিও বার্তায় এমন কথাই বলেছিলেন মাহী।

এই বক্তব্যে তিনি স্বামী রাকিব সরকারকে নিজের জীবনের 'অতীত' বলেও মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেছেন, আমার পেটের মধ্যে বোমা মারলেও মাথায় পিস্তল ধরলেও আমি রাকিবের ব্যাপারে খারাপ কিছু বলতে পারব না।

মাহী বলেন, 'রাকিব আমার সাবেক স্বামী ছিলেন, আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। আমি তাকে ভালোবেসেছি। অল্প না, অনেক ভালোবাসি। যার কারণে আমি সিনেমা থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছি? কারণ তিনি তা পছন্দ করতেন না। সে আমাকে কখনো বলে নাই যে, তুমি সিনেমা করতে পারবে না। আমার মনে হয়েছে যে, ওর এটা (সিনেমা) পছন্দ না। আমি এ জন্য সিনেমা থেকে সরে গিয়েছিলাম।'

মাহী বলেন, 'দীর্ঘদিনের এক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসেছি, সে জন্য মন খারাপ। তবে এটা নিয়ে যেমন নিউজ হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমি কাউকে খুঁজতে ঘুরতেছি। না, আমার কাউকে লাগবে না। আমার ফারিশ আছে। আমি তাকে নিয়েই ভালো আছি। তবে সামনে আমার বড় লড়াই। আমার সন্তান ফারিশকে বড় করতে হবে। তাই আমি নতুন করে কাজ শুরু করতে চলেছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে