মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দীঘি, অধরা সাফল্যের অপেক্ষায়

তারার মেলা ডেস্ক
  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দীঘি, অধরা সাফল্যের অপেক্ষায়

আব্দুস সামাদ খোকন পরিচালিত সিনেমা 'শ্রাবণ জোৎস্নায়' গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে। এটি সরকারি অনুদান পাওয়া ছবি। কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের 'শ্রাবণ জোৎস্নায়' অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি ও গাজী আব্দুন নূর। মুক্তির দিন থেকেই সিনেমাটি দর্শক টানতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে- ফলে এর রেশ ধরে নানাভাবে বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন দীঘি। একই তারিখে নুরুল আলম আতিক পরিচালিত এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা জয়া আহসান অভিনীত 'পেয়ারার সুবাস'ও মুক্তি পায়। দুটো সিনেমাই দর্শক টানতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার আগে তিনটি সিনেমায় পূর্ণ নায়িকা হিসেবে রুপালি পর্দায় দেখা দিয়েছিলেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি।

পূর্ণবয়সি নায়িকা হিসেবে অভিনয় করার অনেক আগে কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'কাবুলিওয়ালা' নামের একটি সিনেমায় শিশু শিল্প হিসেবে অভিনয় করেছিলেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। সেই ১৯০৬ সালে। সেটিই ছিল তার জীবনের প্রথম অভিনীত সিনেমা। শুধু তাই নয়, জীবনের প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেই ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্প হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে দীঘি। তারপরে আরও দুটি সিনেমায় অভিনয়ের কারণে শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। সিনেমায় শিশু শিল্প হিসেবে যে উড়ন্ত সূচনা হয়েছিল দীঘির সেই শিশুটিই আজ পূর্ণ বয়েসি নায়িকা।

গত বছর মুক্তি পায় বায়োপিক শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার' নামের চলচ্চিত্র। 'রেণু' চরিত্রে অভিনয় করা ওই চরিত্রটির জন্য অবশ্য একটি ছবির ব্যবসায়িকভাবে সফল বা অসফল নির্ধারণ করে না।

কিন্তু যে ছবিতে তিনি আছেন নায়িকা চরিত্রে, সে ছবিটি যদি ব্যবসায়িকভাবে মার খায় তখন তো তার কিছুটা হলেও খারাপ লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। এটা যে কোনো কেন্দ্রীয় চরিত্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে কি প্রার্থনা ফারদিন দীঘি একটি চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র বা নায়িকা চরিত্রের জন্য যথাযথ নন? যেমন এক সময়ে তাকে শিশু শিল্পী হিসেবে দেখা গিয়েছিল?

ঢাকাই সিনেমায় এক সময় শিশু শিল্প হিসেবে মাস্টার শাকিল দর্শকের হৃদয়ে এতটাই ঠাঁই করে নিয়েছিলেন যে, যে ছবিতেই সেই মাস্টার শাকিল থাকতেন দর্শক তার অভিনয় দেখতেও প্রেক্ষাগৃহে যেত। এরপর বড় হয়ে সেই মাস্টার শাকিল অনেক চেষ্টা করেছেন অভিনেতা হওয়ার। পারেননি। কারণ কী। শিশু বয়সে তিনি দর্শকের হৃদয়ে যতটা জুড়ে ছিলেন সেটা বড় হওয়ার পর কেন জানি নিমেষেই উবে যায়। আজকের প্রার্থনা ফারদিন দীঘির ক্ষেত্রেও যেন ঠিক তেমটিই ঘটছে। শিশু শিল্প হিসেবে তিনি দর্শকের হৃদয়ে যতটা জুড়ে ছিলেন সেটা বড় হওয়ার পর আর হয়নি। এর কারণ হয়ত দর্শক তাকে যেরকম এক প্রিয় লুকে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তারা আবার তাকে যেন অন্য লুকে দেখতে প্রস্তুত নয়। কারণ, শিশুর প্রতি মানুষের প্রেম যেরকম সার্বজনীন হয়ে থাকে সেটা বড়দের ক্ষেত্রে কস্মিনকালেও হয় না। সেটা প্রতিটি শিশুরই বড় হওয়ার মধ্য দিয়ে দেখা যায়।

এমন নয় যে, প্রার্থনা ফারদিনের অভিনয় ভালো হচ্ছে না সে কারণে তার ছবি একের পর এক ফ্লপ হচ্ছে। কিন্তু যে সিনেমার বাজারের দর্শক কখন কোন সিনেমা পছন্দ করেন সেটাই যদি নির্মাতারা আগে থেকে আঁচ করতে না পারেন তো তিনি কীভাবে কী দিয়ে তার সেই সিনেমা দর্শককে খাওয়াতে পারবেন?

শুধু প্রার্থনা ফারদিনেরই নয়, বর্তমানে নায়িকাদের মধ্যে প্রত্যেকেরই এককভাবে বাজার খুবই খারাপ। বর্তমানে এমন কোনো নায়িকা নেই যে নায়িকার জোরে কোনো সিনেমা ব্যবসা করতে পারছে। যদি না সেই নায়িকা ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খানের বিপরীতে যুক্ত হচ্ছেন। এটা আরও বেশি প্রমাণিত হয়েছে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া অপু বিশ্বাসের সব কয়টিই ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া থেকে। অথচ এই নায়িকা যখন শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করতেন তখন প্রায় সব ছবিই ব্যবসা করত। তার মানে তখন অপু বিশ্বাসের যেসব ছবি ব্যবসা করেছে সেগুলো অপু বিশ্বাসের নায়িকা ইমেজের কারণে নয়, তারকা শাকিব খানের কারণেই। কারণ, এই যে গত বছর মুক্তি পেল 'প্রিয়তমা'- সেই ছবির নায়িকা ইধিকা পালকে তো খোদ কলকাতার মানুষই ভালো করে চিনে না সেখানে এখানে করা তার প্রথম চলচ্চিত্রটি কী করে এত ব্যবসা করল? সেটা কি ইধিকা পালের তারকা ইমেজের কারণেই?

ব্যাপারটি ঠিক এরকমই। বর্তমানে একক তারকা ইমেজের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রি। আর এর কুফলও ভোগ করতে হচ্ছে ঢাকা ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সব নায়িকাদের। কিন্তু শবনম বুবলী, বিদ্যা সিনহা মিম প্রমুখ অভিনেত্রীদের সিনেমা তো এতটা মার খায় না, দর্শক হলেই যাবে না! তারাও তো শাকিব খান ছাড়া অন্যসব নায়কদের সঙ্গে পারফর্ম করছেন। তাদের সিনেমা তো এতটা ফ্লপ হয় না, যতটা ফ্লপ হচ্ছে প্রার্থনা ফারদিন দীঘির সিনেমা? তবে এক্ষেত্রে তাকে নিয়ে করা জুটি নির্বাচনও পারফেক্ট হচ্ছে না?

যা হোক, তারপরও নির্মাতারা দীঘির ওপর আস্থা রাখছেন। ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছেন তিনি আরও একাধিক নতুন সিনেমায়। সর্বশেষ তার জন্য সুখবর যেটি 'মনপুরা'খ্যাত গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে পরিচালক হিসেবে পাওয়া। ছোটবেলা থেকেই এ জনপ্রিয় পরিচালকের ফ্রেমে ধরা দিতে চেয়েছেন দীঘি। এবার সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। অভিনয় করতে যাচ্ছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ওয়েব ফিল্ম 'গাঁইয়া'তে। এটি ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্ম বঙ্গ'র নতুন আয়োজন 'স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রেমের গল্প' সিরিজের অংশ।

কিন্তু এত গেল শর্ট ভার্সন ওটিটির কাজকারবার। যে পর্দায় অনেক স্বপ্ন দিয়ে পা রেখেছিলেন নায়িকা হিসেবে সেখানে তার সাফল্য কবে ধরা দেবে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে