২০১৭ সালের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ দল। এখন পর্যন্ত এটাই দলটির সেরা অর্জন। তবে এবার এসব কিছু ছাপিয়ে নতুন ইতিহাস লিখতে চান নাজমুল হোসেন শান্তর দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এমনটাই বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত।
আগামী ১৯ ফেব্রম্নয়ারি আরব আমিরাত ও পাকিস্তানর শুরু হবে হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বাংলাদেশ দলের সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার রাতে দেশ ছাড়বে। টুর্নামেন্টে তারা পড়েছে কঠিন গ্রম্নপে। স্বাগতিক পাকিস্তান ছাড়াও গ্রম্নপে আছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। গ্রম্নপ কঠিন হলেও নাজমুল হোসেন শান্তরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে। বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দেশ ছাড়ার আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন টাইগার দলপতি। সেখানেই টুর্নামেন্টে নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন শান্ত।
বাংলাদেশের বড় কোনো মঞ্চে খুব বেশি সাফল্য নেই। সর্বোচ্চ সাফল্য সেমিফাইনাল। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই শেষচারে খেলেছিল। এবার লক্ষ্যটা শিরোপা অর্জনের। শান্ত এক কথায় জানালেন সেটাই, 'আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছি।'
ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ ভালো দল। কিন্তু প্রতিপক্ষ যেহেতু ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড। ওই হিসেবে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য ছোঁয়াটা বেশ কঠিন। অধিনায়ক শান্তর এই লক্ষ্য দলের বাকিদের জন্য চাপ হতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক জানালেন, 'আমার কাছে এরকম কোনও কিছু মনে হয় না। এখানে যে আটটা দল আছে, সবাই ডিজার্ভ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। এই আটটা মানসম্পন্ন দল। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দলের এই সক্ষমতা আছে। বাড়তি চাপের কথা, আমার মনে হয় না কেউ বাড়তি চাপ অনুভব করে।'
কেন চাপ অনুভব করছে না দল- এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'কারণ সবাই এটাই চাচ্ছে, তারা এটাই বিশ্বাস করে যে আমাদের এই সক্ষমতা আছে। আমাদের রিজিকে কী আছে সেটা জানি না, তবে আমরা সেভাবেই ফোকাস করছি। সবাই সততার সঙ্গে কাজ করছি, কঠোর পরিশ্রম করছি। প্রত্যেকটা পেস্নয়ার বিশ্বাস করি, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।'
টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, 'আমি আপনার সঙ্গে একমত যে এটা সেরা প্রস্তুতি হচ্ছে না। একটা জিনিস বলতে পারি, তারা ক্রিকেট খেলবে আর সেটা সাদা বলেই। এটার মানে হচ্ছে তারা স্কিলের দিক থেকে শার্পই আছে। স্কিল আছে, আমরা তাদের পারফর্ম করতে দেখেছি, এখন কেবল মানসিকতাটা ওয়ানডের মতো করতে হবে।'
তবে কোচের দাবির প্রেক্ষিতে শান্তর কাছে প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। শান্ত অবশ্য প্রস্তুতির ঘাটতি দেখেন না, 'আমার কাছে মনে হয় না কোচ এরকম কোন কিছু বুঝিয়েছে। সংস্করণের দিক থেকে একটু তো ভিন্নতা থাকেই। কিন্তু যেভাবে ব্যাটসম্যানরা খেলেছে, এই টুর্নামেন্টে উইকেটটা ভালো ছিল, আমরা যে কন্ডিশনে খেলবো আশা করছি, এর চেয়ে ভালো উইকেট থাকবে। ব্যাটসম্যানরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। কীভাবে ৫০-৬০-৭০ থেকে ১০০-১৩০ করতে পারে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। বোলাররাও এই উইকেটে ভালো বল করেছে। আমাদের হাতে এখনো ছয়-সাতদিন আছে, এর মধ্যে আরও গুছিয়ে নিতে পারব।'
ইতিবাচকতা এমন এক জিনিস, যা চাইলে সবচেয়ে খারাপ কিছু থেকেও বের করে ফেলা যায়। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন উদাহরণ হতে পারেন এই বিষয়ে। বিপিএলের শেষ আট ম্যাচে ফরচুন বরিশালের একাদশে জায়গা হয়নি তার। এ নিয়ে চারদিকে নানা শোরগোল-অথচ তিনি কি না এতেও ইতিবাচক কিছুই খুঁজে পেলেন!
বিপিএলের শেষদিকে নাজমুলের অনুশীলনের ঠিকানা বদলে গিয়েছিল। ফরচুন বরিশালের সঙ্গে একাডেমি মাঠ নয়, তিনি অনুশীলন করেছেন ইনডোরের মাঠে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের সঙ্গে। ম্যাচ না খেলার ইতিবাচক দিকটা তিনি খুঁজে পেয়েছেন এখানেই। কীভাবে? চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে আজ মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে তাই ব্যাখ্যা করলেন শান্ত, 'ম্যাচ খেলতে পারি নাই, এর ভেতরেও ইতিবাচক কিছু দিক ছিল। নিয়মিতই অতিরিক্ত ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছি। কীভাবে আরেকটু প্রস্তুত হতে পারি, ওখানে কোচরা সাহায্য করেছে। পাশাপাশি আমি ফিটনেসটা নিয়েও কাজ করেছি। বিপিএলের ওই সময়টা খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। আশা করছি যে যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা ভালো যাবে।'
আট দলের আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে বাংলাদেশ দল সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছে বলেও জানান শান্ত, ্তুআমার কাছে মনে হয় আমরা ওইভাবে মেহনত করছি, আমাদের সততার সঙ্গে কাজ করছি। এবং প্রতিটা খেলোয়াড় বিশ্বাস করি আমাদের যে লক্ষ্য, ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
আগামী ২০ ফেব্রম্নয়ারি দুবাইতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান। এ-গ্রম্নপে এরপর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আছে বাকি দুই ম্যাচ। সেমিফাইনালে যেতে হলে থাকতে হবে সেরা দুইয়ে।