কষ্টের সেই দিনগুলো এখনো ভুলতে পারেননি ফুটবল খেলোয়াড় আল আমিন। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ পাতানো ম্যাচের দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল, পাশাপাশি আল আমিনসহ অন্যদেরও এই অভিযোগে নাম উঠে আসে। ২০১৯-২০২০ মৌসুমে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় নীলফামারির এই ছেলে তখনই ক্যারিয়ারের শেষ দেখছিলেন। কিন্তু যশোরের শামসুল হুদা একাডেমির পরিচর্যায় এক বছর পেরোতে না পেরোতে এই ফরোয়ার্ড ফুটবলে টিকে রইলেন। আপিল করে শাস্তি কমিয়ে এক বছর পরই নামলেন পেশাদার লিগে। চার বছরের মাথায় আল আমিন এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়ে সবাইকে চমকেও দিয়েছেন।
পুলিশ এফসির হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় অনুশীলন করে এসে এক সংবাদ কর্মীর কাছে নিজের জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার খবরটি প্রথম শুনতে পান। তারপর খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা মিলে গেলে আনন্দে আত্মহারা ২১ বছর বয়সি ফুটবলার সংবামদ মাধ্যমকে বলেন,'এমন দিনটির জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। জাতীয় দলে খেলতে কে না চায়। আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। হয়তো সেই ফল পেয়েছি। আমিসহ আমার পুরো পরিবার খুব খুশি।'
আল আমিনের বাবা আমিনুর রহমান ছেলের বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পাওয়ার খবর শুনে গ্রামে মিষ্টি বিলিয়েছেন। আমিনুর রহমান নিজেও গ্রামে ফুটবল খেলে থাকেন। রিকশা চালানোর পাশাপাশি সুযোগ পেলে সতীর্থদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেন। বাবাই আল আমিনের বড় প্রেরণা। আল আমিন তাই বলেছেন, 'বাবা ও মাসহ পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছেন। বাবা আমাদের গ্রামে খুশি হয়ে মিষ্টি বিলিয়েছেন। বাবার ফুটবল সেন্স বেশ ভালো। তিনি সবসময় চাইতেন আমি যেন বাংরাদেশ জাতীয় দলে খেলি। অনুপ্রেরণা দিতেন। শুরুতে ২৩ নম্বর জার্সি পরে খেলি, বাবা বলতেন ৯ কিংবা ১০ নং জার্সি পরে খেলতে। মানে স্ট্রাইকার পজিশন বাবার বেশি পছন্দ। আরও বলতেন, আকর্ষণ এই পজিশনে নাকি বেশি। এরপর তো এখন ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলে তার স্বপ্ন আপাতত পূরণ হয়েছে।'
বিভীষিকাময় সেই দিনের কথা মনে করে আল আমিন জানালেন,'আমি কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছিল। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সেবার। ধরে নিয়েছিলাম ক্যারিয়ার শেষ। মা তো আমার নিষিদ্ধের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে ফুটবলে আবার ফিরে আসি, অনুশীলন করতে থাকি। যশোর শামসুল হুদা একাডেমি না থাকলে হয়তো আজ এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না।'