শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

হৃদয় ভাঙার গল্প বদলানোর অপেক্ষায় তাওহিদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
হৃদয় ভাঙার গল্প বদলানোর অপেক্ষায় তাওহিদ

'একবার না পারিলে দেখো শতবার'। তবে এর মধ্যে তিনবার চেষ্টা করে ফেলেছেন তাওহিদ হৃদয়। একবারও পারেননি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ট্রফিতে চুমু এঁকে দিতে। তিনবার বিপিএল ট্রফির সুবাস পেয়েও হারিয়ে ফেলা এই ব্যাটসম্যানের সামনে এখন আরেকটি সুযোগ।

বিপিএলের সঙ্গে তাওহিদের সম্পর্কটা এখন পর্যন্ত অম্স্ন-মধুর। ২০১৯ সালে তার অভিষেকটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। পরে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে গত দুই আসরে ব্যাট হাতে তিনি মেলে ধরেন চমৎকার ব্যাটিং প্রদর্শনী। তার সেই সাফল্যময় যাত্রায় দলও ছিল সঙ্গী। সবশেষ তিন বিপিএলেই তিনি ও তার দল দল পা রাখে শেষের মঞ্চে।

কিন্তু সেই মঞ্চে উৎসব করা হয়নি তার। শিরোপার সঙ্গে শেষ ধাপের দূরত্ব ঘোচানো হয়নি একবারও। নাগালে পেয়েও তিনি শেষ পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেননি ট্রফি। ধারাবাহিকতার পথ ধরে এবার টানা চতুর্থ আসরে ফাইনালে তার দল। গত তিন আসরের অপূর্ণতা ঘোচানোর সুযোগ এবার ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে চিটাগং কিংসের মুখোমুখি হবে হৃদয়ের ফরচুন বরিশাল। তার টানা তিন ফাইনাল হারের শুরুটাও ছিল এই বরিশাল দিয়েই।

ফাইনালের বেদনাগাঁথার আগে তার বিপিএল অভিষেকের দিনটিতেও একটু ফিরে যাওয়া যায়। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে থাকতেই ২০১৯ সালে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে যাত্রা শুরু হয় হৃদয়ের। কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৮ রান করতে তিনি খেলেন ২৪ বল। সেদিন ডেভিড ওয়ার্নারের রান আউটেও তার ছিল বড় দায়।

বাজে অভিজ্ঞতায় বিপিএল অভিযান শুরু করে পরের আসরে আর দল পাননি হৃদয়। পরে ২০২২ সালের আসরে তাকে নেয় বরিশাল। এবারও কথা বলেনি তার ব্যাট। ফাইনালের আগপর্যন্ত ৯ ইনিংসে করতে পারেন ১২৭ রান। কুমিলস্নার বিপক্ষে কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ৩ বলে করেন মাত্র ১ রান। তবু ফাইনালে তাকে সুযোগ দেয় বরিশাল।

আগের ম্যাচগুলোর ব্যর্থতা ভুলিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল হৃদয়ের। নায়ক হওয়ার মঞ্চ পেয়ে গিয়েছিলেন তরুণ ব্যাটসম্যান। আট নম্বরে তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন, জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন ১৭ বলে ১৮ রান। উইকেট তখনও বাকি ছিল ৪টি।

কিন্তু বাকি ১৭ বলে কোনো বাউন্ডারি পায়নি বরিশাল। শেষ বলে বাকি থাকে ৩ রান। শহিদুল ইসলামের বলে চার মারতে পারেননি হৃদয়। ৯ বলে ৯ রানে অপরাজিত থেকে দলের ১ রানের পরাজয় দেখেন তিনি। ২০২৩ সালে দল বদলে সিলেট স্ট্রাইকার্সে নাম লেখান তরুণ ব্যাটসম্যান। প্রত্যাশা খুব বেশি ছিল না তাকে নিয়ে। কিন্তু এই আসর থেকেই নিজেকে তিনি উপস্থাপন করেন নতুন রূপে। দেশের ক্রিকেট স্বাক্ষী হয় ভিন্ন এক হৃদয়ের। আগ্রাসী ব্যাটিং আর ধারাবাহিতায় দারুণ চমকে দেন তরুণ ব্যাটসম্যান। পেস্ন-অফের আগপর্যন্ত ৯ ইনিংসে ১৪৬.৫১ স্ট্রাইক রেটে তখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান ছিল তার।

কিন্তু পেস্ন-অফে গিয়েই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন হৃদয়। কুমিলস্নার বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে রানের খাতা খুলতে পারেননি। হেরে যায় সিলেট। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ২৫ রান করতে তিনি খেলেন ২৫ বল। সম্মিলিত পারফরম্যান্সে সেদিন জিতে যায় সিলেট। ফাইনালে ফেরেন শূন্য রানে। দলও হেরে যায় সেদিন। আরও একবার ফাইনালের মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফেরেন তরুণ ক্রিকেটার। ওই আসরের পারফরম্যান্স তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। জাতীয় দলের হয়েও দারুণ কিছু ইনিংস খেলেন। গত বিপিএলের আগে তাই তিনি ছিলেন দলগুলির কাছে দারুণ কাঙ্‌িক্ষত। কোটি টাকার বেশি দিয়ে তাকে দলে নেয় টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স।

দল বদলালেও ব্যাটের ধার থাকে একইরকম। আসরজুড়ে ১৪ ইনিংসে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে তিনি করেন ৪৬২ রান। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারেও খেলেন ৪৩ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। কিন্তু ফাইনালের গেরো সেবারও খুলতে পারেননি হৃদয়। বরিশালের বিপক্ষে ১০ বলে ১৫ রান করে তিনি ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। দলের কোনো ব্যাটসম্যান পারেননি চলিস্নশ ছুঁতে। পরে সহজে ম্যাচ জিতে নেয় তামিম ইকবালের দল। সব মিলিয়ে তিন ফাইনালে মাত্র ২৪ রান করতে পারেন হৃদয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে