চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টানা আট ম্যাচ জিতে রীতিমতো আকাশে উড়ছিল রংপুর রাইডার্স। যেখানে ছিল রোমাঞ্চকর কিছু জয়ও। কিন্তু এরপর কি যেন হয়ে গেল তাদের। আর জয়ের দেখাই পেল না তারা। উল্টো টানা পাঁচ হারে এবার টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় নিল নুরুল হাসান সোহানের রংপুর। দারুণ এক জয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের টিকিট কাটল খুলনা টাইগার্স।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এলিমিনেটর রাউন্ডের ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬.৫ ওভারে মাত্র ৮৫ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর। জবাবে ৫৮ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
অথচ হারের বৃত্ত ভাঙতে এদিন তড়িঘড়ি করে দুবাই থেকে আন্দ্রে রাসেল, টিম ডেভিড, জেমস ভিন্সকে উড়িয়ে এনেছিল রংপুর। কোনো বিশ্রাম ছাড়া খেলতে নেমে হয়েছেন চরম ব্যর্থ। উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে দলটি। বিপিএলে এর এগে এলিমিনেটর রাউন্ডে এতো অল্প রানে অলআউট হয়নি আর কোনো দল।
রোববার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হই-চই। বিপিএলের পেস্ন অফের দুই ম্যাচ সোমবার। কোন দলে খেলতে আসছেন কোন বিদেশি খেলোয়াড়? সকালের দিকে যে নামগুলো নিশ্চিত হওয়া গেল, তাতে দেখা গেল, পূর্বাভাস অনুযায়ী বিদেশি সংগ্রহে সবার চেয়ে এগিয়ে রংপুর রাইডার্সই। ইংল্যান্ডের জেমস ভিন্স, অস্ট্রেলিয়ার টিম ডেভিড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল, পাকিস্তানের আকিফ জাভেদ। আকিফ আগে থেকেই খেলছেন রংপুরে।
প্রথম তিনজন আইএল টি-২০ খেলে দুবাই থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান সোমবার সকালে। বিপিএলের এলিমেনেটর ম্যাচের জন্য সকালে নতুন দুই বিদেশি ক্রিকেটার আনে খুলনা টাইগার্সও। দুজনই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান্তজেসন হোল্ডার ও শিমরন হেটমেয়ার। দলে আগে থেকেই ছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ নেওয়াজ ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স রস। ম্যাচের আগে এই দুই তালিকা দেখে থাকলে ভাবা অস্বাভাবিক নয় যে, বিদেশিদের শক্তিতে দারুণ বলীয়ান হয়ে মাঠে নামছে রংপুর। কিন্তু ম্যাচ শেষে এখন বেরিয়ে এসেছে বাস্তবতা। শুধু নামে ভারী হলেই হয় না, দিন শেষে মাঠের পারফরম্যান্সটাই আসল। সেখানে রংপুর রাইডার্সকে রীতিমতো ধসিয়ে দিয়ে ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে গেছে খুলনা টাইগার্স। ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ তাদের সামনে। সোমবার সন্ধ্যার ম্যাচে (প্রথম কোয়ালিফায়ার) হেরে যাওয়া দলের সঙ্গে আগামী ৫ মার্চ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে মেহেদী হাসান মিরাজের খুলনা।
এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। কোনো বল না খেলে সৌম্য সরকার রানআউট হন ভিন্সের ভুল কলে সাড়া দিয়ে। নিজেও কিছু করতে পারেননি ভিন্স। সাত বলে ১ রান করে আউট হয়েছেন বোলার নাসুম আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
ব্যাটিং লাইনআপ কিছুটা উলটপালট করে শেখ মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে উপরে নামিয়ে। যথাক্রমে চার ও পাঁচ নম্বরে নামেন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু দুইজনই ব্যর্থ। পাঁচ বলে ১ রান করা মেহেদী বোল্ড হয়েছেন নাসুমের বলে। আর বাউন্ডারি মেরে শুরু করা সাইফউদ্দিন আট বলে ৮ করে হাসান মাহমুদের বলে পড়েছেন এলবিডাবিস্নউর ফাঁদে। মাঝে মিরাজের শিকার হন সাইফ হাসান (৪)।
এরপর অবশ্য অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু সঙ্গী হিসেবে পাননি কাউকে। আজই উড়িয়ে আনা দুই বিদেশি টিম ডেভিড ও আন্দ্রে রাসেল আউট হন যথাক্রমে ৭ ও ৪ রান করে। তাতে বেরিয়ে যায় দলটির লেজ। রাকিবুল মিরাজের বলে এলবিডাবিস্নউর ফাঁদে পড়লে শেষ দেখতে শুরু করে দলটি।
তবে ১০ নম্বর ব্যাটার আকিফ জাভেদ দলীয় পুঁজি কিছুটা লম্বা করেন। শেষ ব্যাটার নাহিদ রানার সঙ্গে গড়েন ৩৩ রানের জুটি। যেখানে ১৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজে খেলেন ৩২ রানের ইনিংস। যা দলটির ইনিংসের সর্বোচ্চও বটে। তবে পুঁজি বড় করার তাড়না উড়িয়ে মেরে শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন আউট হন একশ রানও তখন বহু দূরে।
খুলনার হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন দুই স্পিনার নাসুম ও মিরাজ। দুইজনই নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। যা পেতে নাসুম খরচ করেছেন ১৬ রান ও মিরাজ ১০ রান। জেসন হোল্ডার ছাড়া বাকি বোলাররাও ভালো করেছেন।
সাদামাটা লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতে অধিনায়ক মিরাজকে হারায় খুলনা। আকিফের বলে বোল্ড হয়ে যান খালি হাতেই। তবে রংপুরের সাফল্য এইটুকুই। এরপর আলেক্স রসকে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ৬০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন এ দুই ব্যাটার।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন নাঈম। ৩৩ বলের ইনিংসটি সাজান ৩টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে। ২৭ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রস। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চারের মার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স: ১৬.৫ ওভারে ৮৫ (ভিন্স ১, সৌম্য ০, সাইফ হাসান ৪, শেখ মেহেদী ১, সাইফ উদ্দিন ৮, সোহান ২৩, ডেভিড ৭, রাসেল ৪, রকিবুল ১, আকিফ ৩২, নাহিদ ০*; মিরাজ ৩/১০, নাসুম ৩/১৬, নাওয়াজ ১/২১, হাসান ১/১৮, হোল্ডার ০/১১, মুশফিক ১/৮)।
খুলনা টাইগার্স : ১০.২ ওভারে ৮৯/১ (মিরাজ ০, নাঈম ৪৮*, রস ২৯*; আকিফ ১/২০, নাহিদ ০/২১, শেখ মেহেদী ০/১৯, রাসেল ০/১৪, রাকিবুল ০/১৩)
ফল: খুলনা টাইগার্স ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: নাসুম আহমেদ।