বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

৩০ হাজার অভিবাসী পাঠানো হচ্ছে গুয়ান্তানামো কারাগারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
৩০ হাজার অভিবাসী পাঠানো হচ্ছে গুয়ান্তানামো কারাগারে
ধারণক্ষমতা বাড়ানোর নির্দেশ ট্রাম্পের

মার্কিন নির্বাচনের আগে এবং পরে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার দেখা গেছে। দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসে শুরুতেই তিনি অভিবাসীদের ওপর কঠোর হয়েছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ সম্পর্কিত একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তবে এবার তিনি অভিবাসীদের নিয়ে সবচেয়ে কঠোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি 'কুখ্যাত' গুয়ান্তানামো বে কারাগারে একটি অভিবাসী বন্দি শিবির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন যেখানে ৩০ হাজার মানুষকে আটকে রাখা যাবে।

তিনি বলেন, কিউবায় মার্কিন নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে অভিবাসীদের জন্য আলাদা বন্দি শিবির রাখা হবে। এটা উচ্চ-নিরাপত্তা বেষ্টিত সামরিক কারাগার থেকে পৃথক হবে। সেখানে আমেরিকান জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ 'সবচেয়ে খারাপ অবৈধ এলিয়েন অপরাধীরা' (অবৈধ অভিবাসীদের ইঙ্গিত করেছেন ট্রাম্প) থাকবে।

গুয়ান্তানামো বে কারাগার দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসীদের বন্দি রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে অনেক মানবাধিকার সংস্থাই এই কারাগার নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন।

এদিকে বুধবার ট্রাম্পের বর্ডার টিজার হিসেবে পরিচিত টম হোম্যান বলেছেন, গুয়ান্তানামো বে কারাগারের বর্তমান সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এর কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় কোস্ট গার্ডের কাছে আটক হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর সরাসরি গুয়ান্তানামো বে কারাগারে পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। অভিবাসীদের জন্য গুয়ান্তানামো বে কারাগারে যে বন্দি শিবির তৈরি হবে তাতে কত খরচ হবে এবং এটি কবে নাগাদ শেষ হবে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে কিউবা প্রশাসন। একই সঙ্গে সেখানে মার্কিন প্রশাসনের নির্যাতন এবং অবৈধ ভাবে লোকজনকে আটক রাখার অভিযোগও আনা হয়।

বুধবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, "(চলমান অভিযানে) যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তাদের মধ্যে এমন খারাপ কিছু লোকজন রয়েছে যে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোও আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সেসব দেশ তাদের ধরে রাখতে পারবে কি না. তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।" "আবার আমরা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভূখন্ডেও রাখতে পারছি না। এ কারণেই এই অপরাধীদের গুয়ান্তানামো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই না যে তারা ফের মার্কিন ভূখন্ডে ফিরে আসুক।"

সম্ভাব্য নতুন কয়েদিদের জন্য গুয়ান্তানামো কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, "অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে নতুন কয়েদিদের জন্য কারাগারের ধারণক্ষমতায় চাপ পড়বে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, গুয়ান্তানামো'র ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পেন্টাগন (মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর) এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্তত ৩০ হাজার নতুন বেড যুক্ত করা হবে কারাগারে। আমি এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছি।" কিউবার গুয়ান্তানামো উপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। সেই উপসাগরেরই একটি দ্বীপে অবস্থান গুয়ান্তানামো কারাগারের। ২০০২ সালে এ কারাগার তৈরির নির্দেশ দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ। গুয়ান্তানামো কারাগার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ও নিশ্চিদ্র বন্দিশালাগুলোর মধ্যে একটি। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের এ কারাগারে রাখা হয়। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করবেন তিনি। নির্বাচনে জয়ের পর সাংবিধানিক বিধি মেনে গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর সে দিনই এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। তিনি আদেশে স্বাক্ষর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে অভিযান। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুই অঙ্গরাজ্য টেক্সাস ও নিউজার্সিতে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নথিবিহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন যৌথ বাহিনী। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ১ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর মিশন পূরণে শুরু হয়েছে এ অভিযান। সূত্র বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে