স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু আর নেই। সোমবার রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে এগারোটার পর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার।
জাকারিয়া পিন্টুর শরীরটা এমনিতে ভালো যাচ্ছিল না। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাননি। রোববার অসুস্থতা আরও বেড়ে গেলে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে ভর্তি হন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক। সোমবার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছেন সাবেক সতীর্থ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে চিরবিদায় নেন ক্রীড়াঙ্গনে অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত এই তারকা ফুটবলার। তার মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টা, ক্রীড়া উপদেষ্টা ও বিভিন্ন সংগঠন।
৮১ বছর বয়সি সাবেক ডিফেন্ডার সিসিইউতে ভর্তি হন। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ফুটবলারের সতীর্থ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা সোমবার বলেছেন, 'পিন্টু ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার হার্ট, কিডনি ও লিভারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বেলা ১২টার কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন তিনি।'
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহঅধিনায়কের পিন্টুর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক প্রতাপ শঙ্কর দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেছেন, 'পিন্টু ভাই গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এত দ্রম্নত আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবতে পারিনি। পিন্টু ভাই আমার খেলার নয়, জীবনেরও অধিনায়ক।'
৮১ বছর বয়স্ক পিন্টু বার্ধক্য ও নানা রোগে ভুগছিলেন। রোববার বাসায় আকস্মিকভাবে পড়ে গেলে তাকে দ্রম্নত হাসপাতালে ভর্তি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। ছেলে তানভীরের স্ত্রী ফাতেমা ফারহানা ইয়াসমিন জানান, 'আজ কিডনির সমস্যার জন্য অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর আগেই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।'
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পিন্টুর মেয়ের সোমবার বিদেশ থেকে আসার কথা। মঙ্গলবার সকালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ অন্য জায়গায় জানাজার পর বিকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত করা হবে। আপাতত বেসরকারি হাসপাতালটিতেই তার মরদেহ রাখা হয়েছে।
পিন্টু শুধু স্বাধীন বাংলা দলের অধিনায়কই ছিলেন না, খেলোয়াড়ি জীবন শেষে সংগঠকও ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের পরিচালক পদেও কাজ করেছেন। এর আগে দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিংকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পিন্টু। ১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি ফুটবল শুরু করেছিলেন পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন মোহামেডানে। সেই ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ডাগআউট সামলেছেন জাতীয় দলেরও। জাকারিয়া পিন্টু কেবল একজন ফুটবলারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দেশের খেলাধুলার একটি ইতিহাস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে ফুটবল ম্যাচ খেলে প্রাপ্ত অর্থ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল তুলে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে।
এই কিংবদন্তির মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডান, দেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ), বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি জাকারিয়া পিন্টুর মৃতু্যতে শোক প্রকাশ ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।