সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। সেই হিসেবে সোমবার শেষবার টেস্টে মাঠে নামেন ইমরুল। মিরপুরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুলনা বিভাগের হয়ে খেলেছেন ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে। শেষটা অবশ্য সুখকর হয়নি। তার দল হেরেছে ৯ উইকেটে। তবে হাসিমুখেই বিদায় জানালেন ইমরুল। সোমবার শেষবারের মতো সাদা পোশাকে খেলতে নামেন। এই দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে তাকে দেওয়া হয় বিদায়ী সংবর্ধনা। উপহার হিসেবে হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট।
৩৭ বছর বয়সি ইমরুল ম্যাচ শেষে আসেন সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে জানান, চাইলে আরও দুই বছর খেলতে পারতেন। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে খেলা ছাড়তে চেয়েছেন বলেই বিদায় জানিয়েছেন। ইমরুলের মনে হয়েছে, টেস্ট খেলার মতো ফিটনেস নেই তার। বিদায়ের এটিই সঠিক সময়।
বাংলাদেশ দলের তারকা ব্যাটার ইমরুল বলেন, 'অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর আমাকে অনেকে বলেছে, চাইলে আরও দুই বছর খেলা চালিয়ে যেতে পারতাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, দুই বছর পর তারাই বলত, এখনো খেলা ছাড়েননি? এ ছাড়া চার দিনের ম্যাচ খেলার মতো পর্যাপ্ত ফিটনেস আমার নেই। এখন চাই ওয়ানডে ও টি২০'র জন্য নিজেকে ধরে রাখতে। সেই এনার্জি আছে।'
তাকে ভাবা হয়েছিল লম্বা রেসের ঘোড়া হিসেবে। জাতীয় দলে অধিকাংশ সময় কেটেছে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে। এ নিয়ে ইমরুল প্রায়শই বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে নির্বাচকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তবে শেষে এসে এসবে নজর দিতে চান না এই বাঁহাতি ব্যাটার। যা কিছু হয়েছে নিজের কপালে লেখা ছিল বলে মনে করেন সুরমা পাড় থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার।
অবধারিতভাবে সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে তার আক্ষেপ-আফসোসের বিষয়গুলো। কিন্তু বিষোদগারের পথে না হেঁটে ইমরুল বলেন, 'এই মুহূর্তে এসে এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। যেটা হয়েছে, আমি মনে করি সেটা আমার কপালে ছিল। আমি বলব না, আমি শতভাগ ঠিক ছিলাম। আমি হয়তো আরও ভালো খেলতে পারতাম। ভালো খেললে হয়তো ধারাবাহিক সুযোগ পেতাম।'
'তবে হঁ্যা সুযোগগুলো যদি আরেকটু ফ্লেক্সিবল থাকত, তাহলে হয়তো আমার ক্যারিয়ারটা ভিন্ন হতো। আমিও জানতাম না, খেলার পর আমি পরের ম্যাচে থাকব কিনা বা পরের সিরিজে থাকব কিনা। এ জন্য একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আর হতাশা নেই।'
টেস্ট শুরুর ২ বছর আগে যাত্রা হয় প্রথম শ্রেণিতে। ১৩৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৩.৭৪ গড়ে রান করেছেন সাত হাজার ৯৩০টি। সেঞ্চুর ২০টি, হাফসেঞ্চুরি ২৭টি। যখন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ শুরু করেন তখনো ভাবতে পারেননি এতদূর আসতে পারবেন।
'২০০৬ সালে যখন আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়, আমি চিন্তা করিনি যে, বাংলাদেশ দলের হয়ে এতগুলো টেস্ট খেলতে পারব। আর সব শেষে এখন যেভাবে বিদায় নিলাম, আমি খুব খুশি যে, বাংলাদেশের হয়ে ৩৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কারণ, এক টেস্ট হোক পঞ্চাশ টেস্ট বা একশ টেস্ট খেলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাই বড়।'
লাল বলের ক্রিকেট ছাড়লেও সাদা বলে এখনো চালিয়ে যেতে চান খেলা। তার প্রমাণ পাওয়া গেল গতকালও। সংবাদ সম্মেলন শেষে ছুটলেন সাদা বলের অনুশীলনে। পরিকল্পনা নিয়ে ইমরুল বলেন, 'আমি আগেও বলেছি বিপিএল ও ডিপিএল খেলব। এনসিএলেও টি২০ খেলব। অবশ্যই আমি চেষ্টা করব... ওয়ানডে যেহেতু এখনও আছে, আমি অবসর নেইনি। সামনে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলা আছে। আমি চেষ্টা করব ক্রিকেট উপভোগ করতে। বিপিএলেও চেষ্টা করব ভালো পারফর্ম করতে।'
ইমরুলের পরিবার থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। ক্যারিয়ার শেষে ক্রিকেট নিয়ে থিতু হতে চান ওখানেই, 'আমি বেশিরভাগ সময়ই অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। সেখানেই আমার থাকতে হবে। কারণ, আমার পরিবার সেখানে থাকে। ওখানেও অস্ট্রেলিয়ার একটা দলের হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলছি আমি। ওখানে একটা কোচিং একাডেমি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এরই মধ্যে কথাবার্তা চলছে, কাজ করছি। আশা করছি, আগামী বছরের দিকে এটা আমরা শুরু করব।'
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে খেলেছেন ৩৯টি টেস্ট। সবশেষ ২০১৯ সালে, ভারতের বিপক্ষে গোলাপি টেস্টে খেলেছিলেন। ৭৬ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে ২৪.২৮ গড়ে এসেছে এক হাজার ৭৯৭ রান। সেঞ্চুরি তিনটি, হাফসেঞ্চুরি চারটি। সর্বোচ্চ ১৫০।