রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে সাধারণত থাকে নীলের ছোঁয়া। তবে এবার তারা ব্যতিক্রম। লাল-সবুজের ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে অনুশীলন জার্সি। কেন এমন করা হলো? কারণ, এবার রংপুর রাইডার্স শুধু তাদের নয়, প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে পুরো দেশের।
প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে গেস্নাবাল সুপার লিগ টি২০। এতে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে রংপুর রাইডার্সও। প্রথমবার বাংলাদেশের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে বাইরে। গায়ানায় পাঁচ দলের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা পাঁচটি ভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজির। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে রংপুর রাইডার্স। শনিবার মিরপুরে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
তিনি বলেন, 'সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। এটা খুব ভিন্ন ধরনের একটা ঘটনা। বাংলাদেশের একটা দল গেস্নাবাল টি২০ খেলতে যাচ্ছে, এমনটা আগে কখনও হয়নি। এটা একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আমাদের ক্রিকেটকে।'
'রংপুর রাইডার্সকে অভিনন্দন। তারা এই মুহূর্তে যতগুলো দল ছিল, তাদের মধ্যে সেরা দল হিসেবেই এখানে যাচ্ছে। একটা পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের নিয়ে, সংগঠিত একটা দল নিয়ে তারা যাচ্ছে। আমরা আশা করব তারা ওখানে ভালো করবে।'
আগামী ২৭ নভেম্বর পর্দা উঠবে গেস্নাবাল সুপার লিগের। এজন্য ২২ নভেম্বর গায়ানার উদ্দেশে উড়াল দেবে দল। যেখানে পুরস্কার মূল্য রাখা হয়েছে ১ মিলিয়ন ডলার। নয় স্থানীয় খেলোয়াড়দের ভিড়িয়ে রংপুর সাম্ভাব?্য সেরা দল নিয়ে যাচ্ছে প্রতিযোগিতায়। জাতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটার রয়েছে স্কোয়াড। আছে বাইরের ক্রিকেটারও। কাজী নুরুল হাসান সোহান এই দলকে নেতৃত্ব দেবেন।
এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে পাঁচ বিদেশির সঙ্গে এবার যুক্ত হলেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের টিম ডিরেক্টর শাহনিয়ান তামিম। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে খুশদিলের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
'টুর্নামেন্টে ১৪ জনের স্কোয়াডের নিয়ম ছিল। অতিরিক্ত যদি থাকে সেটা আমাদের দায়িত্ব, আমরা করব নাকি। আমাদের রংপুর রাইডার্সে বিপিএলেও খেলবেন এবং গেস্নাবালেও জয়েন করবেন পাকিস্তান (অলরাউন্ডার) খুশদিল শাহ।'
খুশদিল এর আগে বিপিএলে খেলেছেন কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। বিপিএলের ১১তম আসরে নেই কুমিলস্না। বিপিএলে খুশদিল ব্যাট হাতে ১৭ ম্যাচে ৩০.৪০ গড়ে ৩০৪ রান করেছেন। আর বল হাতে নিয়েছেন ১০ উইকেট।
রংপুরের বাকি পাঁচ বিদেশি হলেন স্টিভেন টেলর (যুক্তরাষ্ট্র), ম্যাথু ফোর্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), হারমিত সিং (যুক্তরাষ্ট্র) ওয়েন ম্যাডসেন (ইংল্যান্ড) ও জ্যাক চ্যাপেল (ইংল্যান্ড)। আর দেশিদের মধ্যে আছেন নুরুল হাসান সোহান (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান, সাইফউদ্দিন, আফিফ হোসেন, সাইফ হাসান, রিশাদ হোসেন, আরাফাত সানি ও কামরুল ইসলাম।
এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে রংপুর, এমন আশা প্রকাশ করেন বিসিবি পরিচালক ফাহিম। তিনি বলেন, 'শুধু ভালো করাই না, এটা একটা অভিজ্ঞতা। আমাদের অনেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় এর মধ্যে যাচ্ছে। সবার জন্যই এটা একটা অভিজ্ঞতা হবে। রংপুর রাইডার্স শুধু তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে তা না, তারা বিসিবিকে কিংবা তার চেয়েও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে এই টুর্নামেন্টে। আমি আশা করব তারা তাদের সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করবে। আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।'
রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান জানিয়েছেন, তাদের জন্যও এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারা বড় সুযোগ।
তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় যে, এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য বড় সুযোগ এমন একটা গেস্নাবাল টুর্নামেন্ট হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হবে, এখানে অংশ নেওয়া। বাংলাদেশের হয়ে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি দল দেশের বাইরে যাচ্ছে, এটা অনেক বড় পাওয়া আমাদের জন্য।'
'একই সঙ্গে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের জায়গা থেকে শতভাগ ভালো কিছু করার যেন ভবিষ্যতে আমাদের ক্রিকেটে ভালোর জন্য এরকম সুযোগ আসে।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এমনিতে খুব বেশি টি২০ খেলার সুযোগ পান না। এবার জাতীয় দলের আশপাশে আছেন এমন ৯ ক্রিকেটার নিয়ে গেস্নাবাল সুপার লিগের জন্য দল গড়েছে রংপুর। অধিনায়ক সোহানের আশা, এখান থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে পারবেন আরও।
তিনি বলেন, 'অবশ্যই। এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হবে। স্যার (নাজমুল আবেদীন) যেটা ম্যানশন করল, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় শেখার প্রক্রিয়া। আমরা হয়তো খুব বেশি টি২০ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই না। যেহেতু এই টুর্নামেন্ট খেলছি, এরপর জাতীয় লিগ টি২০ আছে, বিপিএল আছে।'
'সবমিলিয়ে এ বছর অনেক বেশি টি২০ খেলতে পারব। আর টি২০ জিনিসটা এমন, আমরা যত খেলব, অভিজ্ঞতা বলেন বা সবকিছু বলেন বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু ওখানে পাঁচটা ভালো মানের দল আছে, আমার কাছে মনে হয় অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলতে পারব। যেটা আমাদের ভবিষ্যতে কাজে দেবে।' এখানকার উইকেটে আগেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে সোহানের। তিনি বলছেন, গায়ানার উইকেট হবে অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। হেড কোচ মিকি আর্থারের সঙ্গে মিলে পরিকল্পনাও সাজিয়েছেন বলে জানান সোহান।
তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে আমরা জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলছিলাম। শেষ চারদিন আমরা এক সঙ্গে অনুশীলন করেছি। আমার কাছে মনে হয় ওখানে গিয়ে তিন-চার দিন অনুশীলনের একটা সুযোগ পাব। আমি শেষ ওয়ানডে সিরিজ ওখানে খেলেছিলাম, গায়ানা ও বাংলাদেশের উইকেট কিছুটা একই।'
'কোচ মিকি আর্থারের সঙ্গে কথা হয়েছে পুরো দলের, কী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা যেতে পারি এবং কেমন পরিস্থিতি হতে পারে সেটার একটা ধারণা সবাই পেয়েছে। ওখানে যাওয়ার পর তিন-চার দিন অনুশীলনের সুযোগ পাব, সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।'