২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্টের দলে ছিলেন ইমরুল কায়েস। সেই ম্যাচের পর আর কোনো ফরম্যাটেই দেখা যায়নি তাকে। ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে বহু আক্ষেপ আছে তার। নির্বাচকরা ঠিকমতো সুযোগ দেননি; সেটি নিয়ে বারবার অভিযোগও তুলেছেন। এবার আর অপেক্ষায় থাকতে চাইলেন না। সব ফরম্যাট না হলেও টেস্ট ফরম্যাটকে বিদায় বলে দিলেন ইমরুল।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন ইমরুল। জাতীয় ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে সেদিন শুরু হবে ইমরুলের খুলনা ও ঢাকার লড়াই। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে একটি পোস্ট করে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। আগামী ১৬ নভেম্বর জাতীয় লিগের পঞ্চম রাউন্ড শেষে ইমরুল বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।
বুধবার দুপুরে ফেসবুকে দেড় মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেই ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন, 'বিদায় টেস্ট ক্রিকেট। আপনাদের ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞ। আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি। ধন্যবাদ, আমার সব ভক্তদের, সব সময় তাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন দেওয়ার জন্য!'
খুলনা টেস্টের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সঙ্গে কী দারুণ প্রতিরোধই গড়েছিলেন ইমরুল কায়েস। এমন আরও অনেক ইনিংসে খেলেছেন দেশের পক্ষে। সেই ইমরুল আর দেখা যাবে না লাল বলের কোনো সংস্করণে।
৩৮ বছর ছুই ছুই ইমরুলের টেস্ট ক্যারিয়ার ছিল মিশ্র পারফরম্যান্সের। টেস্টে অভিষেক হয় ২০০৮ সালের নভেম্বরে। প্রায় ১৬ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ৩৯টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩টি সেঞ্চুরিসহ ২৪.২৮ গড়ে করেছেন ১ হাজার ৭৯৭ রান। সবশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও ১৩৭ ম্যাচে ২৪৬ ইনিংসে ৭ হাজার ৯৩০ রান আছে তার, গড় ৩৪.১৮। ২০টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ২৭টি হাফ সেঞ্চুরি।
চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগে ব্যাট হাতে মোটামুটি ভালোই খেলছেন তিনি। খুলনা বিভাগের হয়ে তার পাঁচ ইনিংসের স্কোর ৮৬*, ৭১, ৪৬, ১৩ ও ০। আগামী শনিবার পঞ্চম রাউন্ড শুরু হবে জাতীয় লিগের। ঢাকার বিপক্ষে নিজেদের পঞ্চম রাউন্ড খেলবে খুলনা। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন এই ওপেনার।
ভিডিও বার্তায় ইমরুল আরও বলেছেন, 'আসসালামু আলাইকুম। আমি ইমরুল কায়েস। আমি বাংলাদেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখে একটা বিষয় জানাতে চাচ্ছি, খুব শিগগিরই আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছি। আগামী ১৬ নভেম্বর আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেরও ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছি। এটি আমার জীবনের ১৭ বছরের সবচেয়ে কঠিন ও আবেগের একটি মুহূর্ত।'
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক কীর্তির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। খুলনায় তামিম ইকবালের সঙ্গে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩১২ রানের মহাকাব্যিক এক জুটি গড়েছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। সেই জুটিতে কায়েসের ব্যাট থেকে আসে ১৫০ রান। ঐতিহাসিক সেই টেস্টে তামিম ও কায়েসের এই জুটি এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব ভক্তদের মনে গেঁথে আছে। তার ক্যারিয়ারের পতনে বাঁহাতি এই ওপেনার নির্বাচকদের দায় দেখেন।
২০০৭ সালের জাতীয় লিগ দিয়েই স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল ইমরুলের। পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট অভিষেক হয় তার। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে লাল বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুটা ভালো করতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়েই অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ার তেমন সমৃদ্ধ নয় ইমরুলের। ক্যারিয়ারের প্রথম ১১ টেস্টে কোনো ফিফটি ছিল তার, ব্যাটিং গড় ছিল ১৩.১৮। প্রথম ফিফটির দেখা পেতে লেগে যায় ২৪ ইনিংস। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে খেলেন ৭৫ রানের সেই ইনিংসটি। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি ৩৩তম ইনিংসে, শ্রীলংকার বিপক্ষে।
চলতি জাতীয় লিগের তিন ম্যাচে পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করে দুটি ফিফটিসহ ৫৩.২৫ গড়ে ২১৩ রান করেছেন ইমরুল। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ও ঘরোয়া ওয়ানডেতে দেখা যাবে তাকে। বিপিএলের ১১তম আসরে ইমরুলকে দলে ভিড়িয়েছে খুলনা টাইগার্স।