দুই বছর পর সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে সেই নেপালকেই পেয়েছে বাংলাদেশ। রোববার রাতে কাঠমান্ডুতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অনেক নাটকের পর ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিক নেপাল। ৩০ অক্টোবর বুধবার সাফের ফাইনালে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও নেপাল। ২০২২ সালে কাঠমান্ডুতেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে রোববার অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ ব্যবধানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। অপেক্ষা ছিল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জিতে কারা হবে লাল-সবুজদের প্রতিপক্ষ। দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে ভারতকে ৪-২ গোলে হারায় নেপাল। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়।
ভারত-নেপাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালটি ছিল নাটকীয় ও উত্তেজনায় ঠাসা। নেপালের একটি গোল নিয়ে তৈরি হয়েছিল অচলাবস্থা। এক ঘণ্টার ওপরে খেলা বন্ধ ছিল। শুরু থেকে ভারতকে চেপে ধরার চেষ্টা করতে থাকে নেপাল। কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় গোল পাচ্ছিল না স্বাগতিকরা। গ্যালারি ঠাসা সমর্থকরা পুরোটা সময় সাবিত্রা-পুজাদের উৎসাহ দিয়ে যান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে ৫০তম মিনিটে রেখা পাডোলকে রেফারি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দিলে। 'রেফারি আউট' স্স্নোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে গ্যালারির চারিধার। এরই মধ্যে মাঠে পানির বোতল, বিয়ারের ক্যান নিক্ষেপ করা শুরু করেন সমর্থকরা। খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। ১০ জনের নেপাল পিছিয়ে পড়ে ৭১তম মিনিটে সঙ্গীতা বাসফোরের গোলে। এরপরই আরেক নাটকীয়তা। ভারতের খেলোয়াড়রা যখন উদযাপনে ব্যস্ত, তখন ভুটানি রেফারি ওম চকি 'কিক-অফ'র নির্দেশ দেন। নেপালের খেলোয়াড়রা দ্রম্নত খেলা শুরু করে ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে সমতার উদযাপনে মাতে। ভারতের দাবির মুখে গোল বাতিল করেন রেফারি, নেপালের খেলোয়াড়রাও বিষয়টি বুঝতে পেরে ফের খেলা শুরু করেন। কিন্তু তখনই আবার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গ্যালারি। চারদিক থেকে মাঠে বোতল, ক্যান, কয়েন নিক্ষেপ শুরু হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ, সমর্থকদের একাংশ, নেপাল দলের তারকা খেলোয়াড় সাবিত্রা ভান্ডারিও করজোড়ে অনুরোধ করতে থাকেন, ভারত কোচকেও অনুরোধের ভঙ্গিতে গ্যালারির দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করতে দেখা যায়; কিন্তু সমর্থকরা 'রেফারি আউট' স্স্নেস্নাগান দিতেই থাকে।
এরই মধ্যে মাঠে ঢোকেন সাফের টেকনিক্যাল কমিটির কর্তারা। রেফারি ওম চকি ও তার দুই সহকারী ও চতুর্থ অফিসিয়ালের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন তারা। তখন ভারতের খেলোয়াড়রা ঠাঁই দেন মাঠের ভেতরের বৃত্তে, নেপাল দলের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের ডাগআউটের একটু সামনে। এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শুরু হয় খেলা এবং প্রথম আক্রমণ থেকেই নেপালকে সমতার উচ্ছ্বাসে ভাসান সাবিত্রা ভান্ডারি। সমর্থকরা এই আনন্দও উদযাপন করেন মাঠে বোতল ছুড়ে! কিছুক্ষণের জন্য ফের খেলা হয় বিঘ্নিত। এরপর কোনো দলকে আলাদা করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে বাজিমাত করে নেপাল।