নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল ম্যাচ আজ। প্রথম সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভুটান। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ২টায় হবে প্রথম সেমিফাইনাল। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটে। যেখানে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। বাংলাদেশের লক্ষ্য শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখা। তবে তার আগে তাদের সেমির বাধা পার হয়ে ফাইনালে নাম লেখাতে হবে। বাংলাদেশ দলের কোচ পিটার জেমস বাটলারের মনে হচ্ছে, ভুটানের বিপক্ষে 'ধৈর্যের পরীক্ষা' দিতে হবে দলকে।
পরিসংখ্যান বলছে ভুটানের কঠিন প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। নারী সাফে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম আসরে গ্রম্নপপর্বে ভুটানের বিপক্ষে ৯-০ গোলের জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর ২০১২ সালে গ্রম্নপপর্বে ভুটানকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ-ভুটান ছিল ভিন্ন গ্রম্নপে। সেবার ভুটান বিদায় নেয় গ্রম্নপপর্ব থেকেই। ২০১৬ আসরেও দেখা হয়নি দুই দলের। ২০১৯ সালে গ্রম্নপ পর্বে ভুটান ২-০ গোলে হারে বাংলাদেশের বিপক্ষে। গত আসরে সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাবিনারা। এছাড়া গত জুলাইয়ে দুই প্রীতি ম্যাচেও সাবিনা-সাগরিকাদের কাছে হার মেনেছিল ভুটানের মেয়েরা। তবে এবারের আসরে একটু ভিন্ন ভুটান। কেননা এই সাফে সর্বোচ্চ ১৭টি গোল দেওয়া দল দুটি। একটি স্বাগতিক নেপাল, অন্যটি ভুটান। এই প্রথম গ্রম্নপপর্বে অপরাজিত থেকে সেমি-ফাইনালের মঞ্চে উঠেছে ভুটান, প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলার হাতছানি তাদের সামনে। আর বাংলাদেশ গিয়েছে মুকুট ধরে রাখার স্বপ্ন নিয়ে। এবারের আসরে এই দুই দলের যাত্রা শুরু অবশ্য ভিন্নরকম। গতবারের রানার্সআপ স্বাগতিক নেপালকে গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে চমকে দেয় ভুটান। শ্রীলংকাকে ৪-১ গোলে হারানোর পর তারা মালদ্বীপকে উড়িয়ে দেয় ১৩-০ ব্যবধানে। গ্রম্নপপর্বে মাত্র ১ গোল হজম করা ভুটান তিনটি ম্যাচই খেলে রক্ষণ জমাট রেখে। সবচেয়ে বেশি রক্ষণাত্মক ছিল নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে। কোচ বাটলার মনে করেন ভুটানের রক্ষণ সাবিনাদের ফেলতে পারে কঠিন পরীক্ষায়, 'আমি তাদের দুটি ম্যাচ দেখেছি। তারা শারীরিকভাবে দীর্ঘকায় এবং শক্তিনির্ভর দল, যারা ১০ জন মিলে অনেক নিচে নেমে রক্ষণ সামলায়। তারা উচ্চাভিলাষী হয়ে উপরে উঠে আসবে না বা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবে না এবং আমাদের প্রতি-আক্রমণে ঘায়েল করতে চাইবে। এটা তাই আমাদের জন্য হবে ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়ার ম্যাচ।'
মালদ্বীপের বিপক্ষে ভুটানের মুড়িমুড়কির মতো গোল পাওয়া ম্যাচে ডেকি লাহজম করেন পাঁচটি। এ মুহূর্তে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াইয়ে নেপালের রেখা পোডেলের সমান (৭টি) গোল এই ফরোয়ার্ডের। তারপরও ভুটানের আক্রমণভাগ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন বাংলাদেশ কোচ, 'ভীষণ দুর্বল প্রতিপক্ষ (মালদ্বীপ), যারা নেপালের বিপক্ষে ১১ গোল খেয়েছে, এই ম্যাচগুলো দিয়ে আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না। ওদের বিপক্ষে আমাদের মূল লড়াইটা হবে ওদের রক্ষণভাগের সঙ্গে আমাদের আক্রমণভাগের।'
চলতি আসরে বাংলাদেশ গ্রম্নপপর্বে খেলা দুই ম্যাচে গোল দিয়েছে ৪টি, হজম করেছে ২টি। তহুরা খাতুন করেছেন ২টি গোল। একবার করে জালের দেখা পেয়েছেন শামসুন্নাহার জুনিয়র ও আফেইদা খন্দকার। অবশ্য এই পরিসংখ্যানে আক্রমণের অনুপাতে গোল নেই, ফলে আক্রমণভাগের উজ্জ্বলতাও প্রকাশ পাচ্ছে না সেভাবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে একের পর এক আক্রমণ শাণিয়ে হতাশ হওয়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত গোল পায় দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে। রক্ষণের গভীরে নেমে শামসুন্নাহার-সাবিনাদের আটকে রাখার কৌশল নিয়ে প্রায় সফল হওয়ার পথেই ছিল পাকিস্তান। ভুটান ম্যাচে তাই ফরোয়ার্ডদের আরও সৃষ্টিশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন বাটলার, 'অবশ্যই আমাদেরকে আরও স্মার্ট ও সৃষ্টিশীল হতে হবে। সে জন্য আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। তবে, হ্যাঁ, ভুটানকে শ্রদ্ধাও করতে হবে, তাদেরকে মোটেও হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।'