বাংলাদেশ ক্রিকেটে দুঃসময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে অনেকবারই নায়ক হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ! যখনই দল চাপে পড়েছে তখনই দায়িত্ব নিয়েছেন। কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছেন, কখনও পারেননি। তবে নিজ দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যাননি এই অলরাউন্ডার। এই দায়িত্বে দিনে দিনে আরও পরিণত হচ্ছেন মিরাজ। পাকিস্তান সিরিজে ইতিহাস গড়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও চাপের মুখে লড়েছেন দেশের হয়ে। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে সতীর্থরা যখন একের পর এক উইকেট হারানোর মিছিলে মেতেছিলেন মিরাজ তখন আগলে রেখেছেন উইকেট। দলের হয়ে ব্যাটিংয়ে যেটুকু লড়াই করেছেন সেটা জাকেরকে করেন মিরাজই। বাকিদের ব্যাটিংয়ে শুধু হতাশার সুর। চূড়ান্ত চাপের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ৯৭ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেছেন মিরাজ। যেই টেস্ট দ্বিতীয় দিনই পরাজয়ের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল সেই টেস্টকে তিনি নিয়েছেন চতুর্থ দিনে। বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত জেতাতে না পারলেও ইনিংস ব্যবধানের পরাজয় এড়িয়েছেন মিরাজ। এমন ম্যাচে দেশ হারের পর সংবাদ সম্মেলনে মিরাজকে প্রশ্ন, কীভাবে চাপের মুখে ভালো করেন তিনি। জবাবে, মিরাজ জানালেন চাপের মুখেই বেশি উপভোগ করেন তিনি। এমনকি ওই সময়ে ভালো করলে হিরো হওয়ার সুযোগ থাকে বলেও মনে করেন এই অফ স্পিনার। মিরাজের ভাষায়, 'দেখুন আমি সবসময় কঠিন অবস্থা উপভোগ করার চেষ্টা করি। বেশি কিছু চিন্তা করি না। শুধু ভাবি যে আমি যদি এখান থেকে ভালো খেলি, তাহলে হিরো হওয়ার সুযোগ থাকবে।' গতকালও সেই সুযোগ ছিল মিরাজের সামনে। চেয়েছিলেন দলের লিড দেড়শতে নিতে। নিজের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় খারাপ লেগেছে তার, 'একজন ব্যাটারের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলে অবশ্যই খারাপ লাগে। আমার কাছেও অবশ্যই খারাপ লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা আমি যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছিলাম সেটা যদি পূরণ করতে পারতাম তাহলে আরও ভালো লাগতো। আমি চেয়েছিলাম, ইনিংসটা যতদূর নিয়ে যেতে পারি। নিজের সেঞ্চুরি নিয়ে চিন্তা করিনি। আমাদের কিছু কিছু জায়গায় ভুল হচ্ছে এই জন্য আমাদের ব্যাটিংয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের ব্যর্থতা আমরা স্বীকার করছি।' হারের ম্যাচে প্রাপ্তি কিংবা স্বস্তি কেবলই মেহেদী হাসান মিরাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে প্রথম টেস্ট শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থকরা চাইলে এমনটা বলতেই পারেন। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট আর দক্ষিণ আফ্রিকার ২০২ রানের লিডের পর খুব বেশি আশা ছিল না এই ম্যাচকে নিয়ে। তবু যেটুকু স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখেছে তাও মিরাজের কল্যাণে। দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন ১১২ রানের মাঝেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের অর্ধেক আউট, তখন দায়িত্ব নিয়ে নিজের খেলাটা শুরু করেছিলেন মিরাজ। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে আউট হয়েছেন সবার শেষ ব্যাটার হিসেবে। নামের পাশে তখন ৯৭ রান। ম্যাচের পর উঠে এলো তার ব্যাটিং নিয়ে কথা। সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ শুনলেন ওপরের দিকে ব্যাট করার পুরাতন প্রশ্নটা। অবশ্য ওপরে বা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করা নিয়ে মিরাজ সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে, 'এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ডিসিশন। দলের ভালোর জন্য কোথায় খেলা প্রয়োজন এটা তারা নির্ধারণ করবেন।' পরে নিজের ব্যাটিং নিয়ে মিরাজ বলেন, 'আমার সুযোগ বাড়ছে। ভালো লাগছে, সুযোগ যেন কাজে লাগাতে পারি। আমি যেখানে ব্যাট করি, অনেক কঠিন। আমি ভালো খেললে দল ভালো জায়গায় যাবে, খারাপ খেললে ভালো করবে না। আমি মানসিকভাবে চেষ্টা করছি নিজেই ভালো খেলার। আলহামদুলিলস্নাহ রান করছি। আগেও দেখেছি আমি ভালো করলে দলের উপকার হয়। ওই জিনিসটাই চেষ্টা করছি, দিনকে দিন ব্যাটিং উন্নতির চেষ্টা করছি। ক্যারিয়ারের শুরুতে টেস্টে গড় ছিল দেড়! দিনকে দিন চেষ্টা করছি উন্নতির, সেভাবেই কাজ করছি।' নিজের ব্যাটিং নিয়ে মিরাজের বক্তব্য, 'চেষ্টা করছি প্র্যাকটিস করার জন্য। বেশিরভাগ সময়ই আমাকে নতুন বলে ব্যাট করতে হয়। ৮০ ওভারের পর বোলারদের নিয়ে ব্যাটিং করতে হয়। নিজেকে সেভাবে মানসিকভাবে তৈরি করছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কীভাবে টিকে থাকতে পারি, রান করতে পারি, বোলারকে ডমিনেট করতে পারি। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেয়ার করি, তারাও শেয়ার করে। আমাদের সবসময় কথা হয়। যে ২ জন ব্যাটিং করে উইকেট সবচেয়ে ভালো বোঝে। তারা সবসময় তথ্য দিতে থাকে ব্যাটারদের।' তবে বাংলাদেশ দলের এই অলরাউন্ডারের আক্ষেপ টপ অর্ডার থেকে প্রত্যাশা মোতাবেক রান আসছে না। তিনিও জানেন টপঅর্ডারের রানটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, 'ওপর থেকে রান এলে দলের জন্য ভালো হতো, আমি এই সাপোর্ট দিলে দল আরও ভালো করত। যেহেতু ওপর থেকে ব্যাটাররা ৯ টেস্টের কথা বললেন হয়নি। আমার মনে হয় যতটুকু করেছে তারচেয়ে আরও ৫০ শতাংশ ভালো করলেও আরও ভালো হতো। ইনিংস বড় হয়নি।' কথা প্রসঙ্গে মিরাজ টেনে আনেন পাকিস্তান সিরিজের কথাও, 'একজন ক্লিক করেছে, ২ জন করলে, একজন ৫০-৬০ করেছে এটা ১০০ হলে, ৩০ ৭০ হলে টপ অর্ডার থেকে, দৃশ্য ভিন্ন হতো। পাকিস্তানে যে ম্যাচে ৫০০ করেছি টপ অর্ডার ভালো শুরু দিয়েছিল। সাদমান, সৌরভ ভাই, মুশফিক ভাই। তখন আমার ৭৭ রানে রান ৫০০'র বেশি হয়েছে। লিটনও ফিফটি করেছিল। টপ অর্ডার ভালো শুরু পেলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।'