বরাবরের মতো মিরপুরে স্পিনসহায়ক উইকেটই পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে পেসারদের জন্যও যে দারুণ সুবিধা রয়েছে, তা আগের দিনই বলে গিয়েছেন প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা। সেখানে একাদশে মাত্র এক পেসার হাসান মাহমুদকে নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। দিন শেষে তাই মজা করেই হাসান বললেন, 'দুই দিক থেকেই বোলিং করতে পারলে আরও ভালো হতো।'
প্রতিপক্ষের জন্য মিরপুর যে স্পিন ফাঁদ হবে, তা ছিল অনেকটা প্রত্যাশিত। একাদশেও তাই ছিলেন পেসার স্রেফ হাসান মাহমুদ। স্বস্তি অবশ্য পাননি তিনি। তাকে দিয়েই ১৯ ওভার বল করাতে হয়েছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ১০১ রান করেছে বাংলাদেশ। এখনো ১০১ রানে পিছিয়ে আছে দলটি। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কে জানে পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছেন, এতে টাইগারদের একাদশে আরেকজন পেসার থাকলে হয়ত ভিন্ন কিছুও হতে পারত।
সংবাদ সম্মেলনে তাই একাধিকবারই উঠে আসে আরেক পেসারের ঘাটতির বিষয়টি। যদিও হাসান বারবারই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন, 'আমি মনে করি, উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক বোলারেরই একই দায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে, একজন পেসার বাছাই করা হোক না কেন, আমার কাজ হলো উইকেট-টেকিং ডেলিভারি বোলিং করা, পার্টনারশিপে বোলিং করা এবং এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় না যে, একজন বা দুইজন পেসার ভালো কিনা। এটা তাদের (টিম ম্যানেজমেন্ট) ওপর নির্ভর করে।'
বাংলাদেশের দুই ইনিংসেই প্রোটিয়া পেসারদের দাপট ছিল দেখার মতো। প্রথম ইনিংসে রাবাদার সঙ্গে একত্রে জুটি বেঁধে বোলিং করে টাইগারদের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন উইয়ান মুল্ডার। দুই পেসারই নেন ৩টি করে উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে এর মধ্যেই বাংলাদেশের দুই ব্যাটারের উইকেট নিয়েছেন রাবাদা। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে মুল্ডারকে নিয়ে এদিন যখন চোখ রাঙ্গাচ্ছিলেন কাইল ভেরেইনা, তখন জুটি ভাঙেন এই হাসানই। পরের বলে কেশভ মহারাজকে পেয়ে দিয়েছিলেন জোড়া ধাক্কা। তখন আরেকজন পেসারের আক্ষেপে হয়ত পুড়েছেন টাইগার অধিনায়ক।
তাই সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শেষে যখন হাসানকে আবারও সেই প্রশ্ন করা হয়, তখন মজা করেই এই পেসার বললেন, 'আমি যদি দুই দিক থেকে বোলিং করতাম, তাহলে সেটা আরও ভালো হতো।'
তার চেয়ে বেশি বল করেছেন কেবল তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশ দলকে আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন হাসান মাহমুদ। তিন উইকেট পেয়েছেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা নিয়েছেন ছয় উইকেট।
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জুটি। এ ক্ষেত্রে হাসান মাহমুদ অবশ্য একদমই একা। এটিও কি কোনো সমস্যা তৈরি করছে না? এমন প্রশ্ন ছিল হাসান মাহমুদের কাছে। তিনি বলছেন, এতে সমস্যা নেই তার।
হাসান বলেন, 'আমি ফিল্ডার অনুযায়ী বল করি। অপর দিক থেকে কেউ যদি মেডেন ওভার নিতে চায়, সেরা বলটাই করতে হবে সবসময়। তো দুইজনে কথা বলেই বল করা হয় আসলে, কীভাবে রান আটকানো যায়। বাউন্ডারি না দিয়ে, বাজে বল না করে বল করা যায়। স্পিন একপাশে, পেস একপাশে হলেও সমস্যা নেই। করা যায়। (দুই পাশে পেসার) না, এ নিয়ে চিন্তা থাকে না।'
প্রথম ছয় জুটিতে ৫০ রান করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু পরের দুটিতেই তারা করেছে এটি। ১০৮ রানে ছয় উইকেট হারানো প্রোটিয়ারা শেষঅবধি করেছে ৩০৮ রান। এমন প্রায়ই হয় বাংলাদেশের সঙ্গে। বোলিংয়ে কি এমন সময় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন হাসানরা?
উত্তরে তিনি বলেন, 'আসলে টেস্টে এমনটা হয়, অহরহ হতে থাকে, আমরাও দেখি, আমাদেরও বিরক্তি চলে আসে। আমরা তখন চাই রান কম দিতে, বেসিকটা ধরে রাখতে হবে। আপনার চেষ্টা করতে হবে ব্যাটারকে চাপে রাখার। দুই পাশ থেকে জুটি গড়ে বোলিং করা। এটাই আপনার হাতে আছে। এটাই আরকি!'