ভারতকে লজ্জায় ডুবিয়ে ৪৬ রানে অলআউট করল কিউইরা
প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
নিউজিল্যান্ড ভারতে এসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতেই পারেনি নয়ডা টেস্টে। বেঙ্গালুরু টেস্টেও বুধবার প্রথমদিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। দুই টেস্ট মিলিয়ে ৬ দিন অপেক্ষার সব শোধ যেন তুলল ভারতের ওপর। টিম সাউদি রোহিত শর্মার উইকেট নিয়ে শুরু করেছিলেন ধ্বংসযজ্ঞের। এরপর থেকে একেবারেই পাত্তা পায়নি টিম ইন্ডিয়া। ম্যাট হেনরি আর উইল ও'রোর্ক এর পেস বোলিংয়ের সামনে অসহায় ছিল ভারত। মাত্র ৪৬ রানে অলআউট নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা পেয়েছে ভারত। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৮০ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। ফলে প্রথম ইনিংসে এর মধ্যেই ১৩৪ রানে এগিয়ে আছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে প্রবল বিক্রম দেখানো ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়েছে নিউজিল্যান্ডের সামনে। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কিউই বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ভারতীয় ব্যাটাররা। স্কোরবোর্ডে প্রথম ইনিংস শেষে ভারতের সংগ্রহ ৪৬ রান, উইকেট একটিও বেঁচে নেই। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে মাত্র ৪৬ রানে অলআউট হয়েছে ভারত। বলে রাখা ভালো, আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের অবস্থান সবার ওপরে। বেঙ্গালুরুতে চলছে ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্ট। টেস্টের প্রথম দিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার ভারতীয় ব্যাটাররা ভেসে গেলেন বানের জলের মতোই। আসা যাওয়ার মিছিলে ১১ জন মিলে ক্রিজে টিকতে পেরেছেন ৩১.২ ওভার। ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছেন তিন কিউই পেসার। মাত্র ১৫ রান দিয়ে ম্যাট হেনরি তুলে নেন পাঁচ উইকেট। সাদা পোশাকে মাত্র পঞ্চম টেস্ট খেলতে নামা উইলিয়াম ও'রোর্ক ২২ রানে চার শিকার করেন। বাকি উইকেটটি নেন টিম সাউদি। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে এটি ভারতের তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। তবে এরচেয়েও বড় লজ্জা পেয়েছে রোহিত-কোহলিরা। নিজেদের মাটিতে এটিই ভারতের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। কেবল ঘরের মাঠেই নয়, টেস্টের প্রায় দেড়শ' বছরের ইতিহাসে পুরো এশিয়াতে এক ইনিংসে এত কমে অলআউট হয়নি আর কোনো দল। ইনিংসে ভারতের হয়ে দুই অঙ্কের রান স্পর্শ করতে পেরেছেন মাত্র দুজন। ঋষভ পান্তের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ২০ রান, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ রান করেন যশস্বী জাইসওয়াল। পাঁচজন খুলতে পারেননি রানের খাতাই, যার মধ্যে আছেন বিরাট কোহলিও! সর্বোচ্চ জুটি চতুর্থ উইকেটে ২১ রানের। নিউজিল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংস শুরু করে ওপেনিং জুটিতেই লিড এনে দেন দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ৬৭ রানের জুটি গড়েন এ দুই ওপেনার। ল্যাথামকে এলবিডাবিস্নউর ফাঁদে ফেলে এ জুটি ভাঙেন কুলদিপ যাদব। ৪৯ বলে ১৫ রান করেন অধিনায়ক। এরপর উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে ৭৫ রানের আরও একটি জুটি গড়েন কনওয়ে। ইয়ংকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা। তার ক্যাচ ফাইন লেগে যখন ধরেন কুলদিপ, ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের লিড ছাড়ায় একশ। ৭৩ বলে ৩৩ রান করেন ইয়ং। এরপর অবশ্য দ্রম্নত আরেক সেট ব্যাটার কনওয়েকে তুলে নেয় স্বাগতিকরা। তাকে বোল্ড করে দেন অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ১০৫ বলে ১১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯১ রান করেন তিনি। এরপর দলের হাল ধরেন রাচীন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেল। অবিচ্ছিন্ন ২৬ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত রয়েছেন দুই ব্যাটারই। রাচীন ২২ ও মিচেল ১৪ রানে ব্যাটিং করছেন। ভারতের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০২০ সালে ৩৬ আর ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত করেছিল ৪২ রান। ঘরের মাঠে এটিই ভারতের টেস্টে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও এটিই সবচেয়ে কম রানে আউট হওয়ার নজির। ভারতের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বনিম্ন রানের স্কোর। গত বিশ্বকাপে শ্রীলংকা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৫৫ রানে। এশিয়ার মাঠে টেস্টে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। এর আগে ৫৩ রান পাকিস্তান করেছিল ফয়সালাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে (১৯৮৬ সাল) এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শারজাহ স্টেডিয়ামে (২০০২ সাল)। এছাড়া টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে এটি চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর। ০, ০, ০, ০ এবং ০ ১৮৮৮ সালের পর প্রথমবার শীর্ষ ৮ ব্যাটারের মধ্যে ৫ ডাক। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ডাক মারার হিসেবে ভারতের জন্য যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (সর্বোচ্চ ৬ বার) ঘরের মাঠে প্রথমবার ভারতের শীর্ষ ৭ ব্যাটারের মধ্যে ৪ ডাক। ভারতের মাঠে পেসারদের জন্য সবচেয়ে ভালো বোলিং ফিগার। সবশেষ ভারতে পেসারদের ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি ছিল ২০০৮ সালের আহমেদাবাদ টেস্টে। সেবার ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া পেসাররা সেদিন ৬১ রান খরচায় ১০ উইকেট নিয়েছিলেন।