রিশাদ হোসেনকে নিয়ে চাঞ্চল্য থাকল অনেকটা সময় পর্যন্ত। চাঞ্চল্য না বলে কৌতূহল বলাই ভালো। পেস্নয়ার্স ড্রাফটের ষষ্ঠ রাউন্ড পর্যন্ত কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই ডাকেনি তাকে। শেষ পর্যন্ত সপ্তম রাউন্ডে তাকে দলে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল। কিন্তু গতকাল পেস্নয়ার্স ড্রাফটে যদি দল না পেতেন রিশাদ, কী হতো তার?
রিশাদ যেহেতু দল পেয়েই গেছেন, দল না পেলে তার কী হতো, সেটি জানার আগে একবার বিপিএলের ড্রাফট রুম থেকে ঘুরে আসার চেষ্টা করা যাক। পাঁচ তারকা হোটেলের বল রুমের সামনের প্যাসেজে ঢোকার অনুমতি নেই। কার পোর্চ থেকে ওদিকে যাওয়ার গেইট বন্ধ। ভেতর থেকে সুইমিং পুলের পাশ ঘেঁষে বল রুমের দিকে যাওয়ার পথেও অস্থায়ী দেয়াল। অর্থাৎ বল রুমের আশপাশে থেকে বিপিএলের পেস্নয়ার্স ড্রাফটের উত্তাপ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে যখন র?্যাডিসন হোটেলে ড্রাফট হয়েছিল, তখন ড্রাফট রুমের ঠিক বাইরেই ছিল সংবাদকর্মীদের কাজের ব্যবস্থা। এবার তা নয়। সংবাদকর্মীরা বসেছেন দোতলার পদ্মা হল রুমে। টেলিভিশনে ড্রাফট সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। সেখান থেকেই তথ্য টুকে নিচ্ছেন সবাই।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ড্রাফট টেবিলে কারা বসতে পারবেন, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল থেকে আগেই সেটি ঠিক করে দেওয়া আছে। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষে থাকতে পারবেন ৭ জন করে, সরাসরি সাইন করা বা আগেরবার থেকে ধরে রাখা খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে একজন, প্রধান কোচ, টিম ম্যানেজার, পারফরম্যান্স এনালিস্ট ও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক পক্ষের ৩ জন প্রতিনিধি।
ড্রাফট সরাসরি দেখানো হয়েছে টি-স্পোর্টসে। এছাড়া বিসিবি ও বিপিএল অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজেও। প্রথম আলো অনলাইনও বিপিএলের ড্রাফট লাইভ করেছে।
স্থানীয় ও বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পুনর্বিন্যাসের পর এবারের ১১তম বিপিএলে স্থানীয় খেলোয়াড় নিতে একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি খরচ করতে পারবে সর্বোচ্চ ৪ কোটি টাকা। বিসিবির শর্ত অনুযায়ী স্থানীয় খেলোয়াড়দের পেছনে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির খরচ এর বেশি হতে পারবে না। তবে ধরে রাখা খেলোয়াড় এবং সরাসরি চুক্তির খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক এর বাইরে।
আগেরবারের দল থেকে কোনো খেলোয়াড় ধরে রাখতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা অবশ্য নেই। এবারের বিপিএলে থাকা আগেরবারের চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সরাসরি চুক্তিতে একজন খেলোয়াড় নিতে পারলেও নতুন তিন ফ্র্যাঞ্চাইজির যেহেতু পুরনো খেলোয়াড় ধরে রাখার সুযোগ নেই, তারা সরাসরি চুক্তিতে নিতে পারছে দু'জন করে খেলোয়াড়। তবে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্যই এটাও বাধ্যতামূলক নয়।
প্রসঙ্গক্রমে খোলাসা করে দেওয়া যাক, রিশাদের বিষয়টা। ড্রাফটের তালিকার স্থানীয় 'এ' শ্রেণিতে থাকা ১২ ক্রিকেটারের মধ্যে ষষ্ঠ ডাক পর্যন্ত অবিক্রীত ছিলেন রিশাদ। সপ্তম ডাকে তাকে দলে নেয় ফরচুন বরিশাল। টি২০তে জাতীয় দলে অপরিহার্য হয়ে ওঠা এই লেগ স্পিনার গতবার 'ই' শ্রেণিতে ড্রাফটে থাকলেও এবার এক লাফে ওঠে এসেছেন ৬০ লাখ টাকার 'এ' শ্রেণিতে। ড্রাফটের মিডিয়া রুমে শঙ্কা- তবে কি 'এ' শ্রেণিতে উন্নীত হওয়াটাই কাল হয়ে ওঠে রিশাদের! দল না পেলে কী হবে রিশাদের?
শেষ পর্যন্ত তিনি যদি অবিক্রীতই থেকে যেতেন, পেস্নয়ার্স ড্রাফটের নিয়ম অনুযায়ী ড্রাফট কমিশনার শুধু তার জন্যই ডাকতেন আলাদা নিলাম। সে ক্ষেত্রে রিশাদের ভিত্তি মূল্য ধরা হতো 'এ' শ্রেণিতে তার মূল্যের অর্ধেক, মানে ৩০ লাখ টাকা।
নিলামে রিশাদের ডাক ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেলে এবং তখনো যদি একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে নিতে আগ্রহ দেখাত, তখন লটারির মাধ্যমে রিশাদের দল ঠিক করা হতো। প্রতিবারের মতো এবারও ড্রাফট কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন বিসিবি পরিচালক মাহবুবুল আনাম।
সরাসরি চুক্তি বা ড্রাফটের তালিকার বাইরে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে নিতে পারবে ইচ্ছেমতো বিদেশি খেলোয়াড়। প্রতিটি দল বিদেশি খেলোয়াড়দের পেছনে খরচ করতে পারবে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ ডলার। বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে হবে কমপক্ষে দু'জন। পেস্নয়ার্স ড্রাফট থেকে বিদেশি নিতে হবে কমপক্ষে ৩ জন। পেস্নয়িং ইলেভেনে বিদেশি থাকবে কমপক্ষে ২ জন, সর্বোচ্চ ৪ জন।