রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ করে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন মুমিনুল হক। দাপুটে এক ইনিংসে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন। এর আগে এই অশ্বিনকেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড অফে দারুণ এক ছক্কায় পা দেন নব্বইয়ের ঘরে। নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার হতে-হতেও হননি ঋষভ পান্ত-বিরাট কোহলির ব্যর্থতায়।
দর্শকদের উলস্নাস আর বাশির ফুঁতে মেতে ওঠে গ্রিনপার্ক। প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির (১৩) মালিক মুমিনুলের উচ্ছ্বাস অবশ্য বেশি ছিল না।
বল বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার পর উইকেটের মাঝে এসে হেলমেট খোলেন, ব্যাট ওপরে তোলেন এরপর মুমিনুল সেজদা দিয়ে উদযাপন করেন। ১৭২ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। কানপুরের ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে ১৯৪৫ থেকে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি হয়েছে ৩৫টি।
সর্বোচ্চ৩টি সেঞ্চুরি ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের। এই তালিকায় আছেন গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম থেকে শুরু করে কপিল দেব ও সুনীল গাভাস্কার। ২৭তম ক্রিকেটার হিসেবে মুমিনুল শতক হাঁকান ব্রিটিশ আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটিতে।
মুমিনুলের সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৬টি চার ও ১টি ছয়ের মারে। ফিফটি করেন ১১০ বলে। ফিফটির পর সেঞ্চুরি পেতে খরচ হয় মাত্র ৬২ বল! চতুর্থ দিন জুড়ে মুমিনুলকে দেখা গেছে আগ্রাসী রূপে। কখনো সুইপ, কখনো পুল আবার কখনো ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা!
বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম দিন জাসপ্রীত বুমরাহকে এক দুর্দান্ত কাভার ড্রাইভে শাসনের শুরু। এক শটেই যেন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন লম্বা ইনিংসের। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। ৪০ রানে প্রথম দিন শেষ করেন। এরপর দুদিন কেটে যায় বৃষ্টিতে। তবে মুমিনুল যেন ছিলেন সেদিনের ফর্মেই!
অথচ ইনিংসের শুরুটা ছিল কিছুটা নড়বড়ে। প্রথম ১৩ বলে কোনো রান আসেনি। এরপর ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন। নাটাই নিয়ে নেন নিজের হাতে। এক প্রান্তে আগলে রাখলেও অপর প্রান্তে ছিল না স্থিরতা। সতীর্থরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। সর্বোচ্চ ৫১ রানের জুটি আসে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে।
মাঝে ফেরেন মুশফিকুর রহিম (১১), লিটন দাস (১৩) ও সাকিব আল হাসান (৯)। এর আগে শুরুতেই ফিরেছিলেন সাদমান ইসলাম (২৪)। সেঞ্চুরির দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজের
সঙ্গে জুটিতে।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম হলেও দেশের বাইরে এটি মুমিনুলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে দেশটির মাটিতে ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। এই সেঞ্চুরির আগে সবশেষ শতক ছিল ২০২৩ সালের জুনে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে মুমিনুলের ১৩ সেঞ্চুরির পরে আছে মুশফিকের
১১ ও তামিম ইকবালের ১০টি।
মুমিনুলের এই ইনিংস নিয়ে প্রশংসা করেছেন ধারাভাষ্য দিতে কানপুরে আসা তামিম, 'মুমিনুলের কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছে, যে শটগুলো সে খেলেছে সব ছিল ক্রিকেটিং শট। সে এই ইনিংস নিয়ে নিশ্চয়ই গর্বিত হবে।'